কোটা আন্দোলন নিয়ে যা বললেন কবীর সুমন

বিনোদন প্রতিবেদক
১৮ জুলাই ২০২৪, ১৪:২২
শেয়ার :
কোটা আন্দোলন নিয়ে যা বললেন কবীর সুমন

দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা নিয়ে মুখ খুললেন কলকাতার বরেণ্য সংগীতশিল্পী কবীর সুমন। আন্দোলনকারীদের ওপর সহিসংতা বন্ধে সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আজ বৃস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘করজোড়ে সব পক্ষকে মিনতি করছি, অনুগ্রহ করে হিংসা-হানাহানি বন্ধ করুন। ঢাকা সরকারকে অনুরোধ করছি- বাংলা ভাষার কসম, শান্তি রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আপনাদের ছাত্রবাহিনী যেন হিংসার আশ্রয় না নেন।’

ওই পোস্টে কবীর সুমন আরও লিখেছেন, ‘আমি ভারতের নাগরিক। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। তার বিষয়-আশয়ে নাক গলানোর অধিকার আমার নেই। সেটা করতে চাইও না। তবু বাংলাদেশের অনেকের কাছ থেকে যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা ভুলে থাকতেও পারছি না। ভুলবই-বা কেন?’

ওপার বাংলার এই গায়ক লিখেছেন, ‘ছবি দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। একটু আগেই দেখলাম। মিছিল করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। নেপথ্যে শোনা যাচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের “কারার ঐ লৌহকপাট/ ভেঙে ফেল কর রে লোপাট”! মনে হচ্ছে গানটি এডিট করে বসানো হয়েছে ভিডিওর সঙ্গে। ঠিক কাজই করা হয়েছে। কত সময়ে দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আমার গানের লাইন লিখে দিয়েছেন দেওয়ালে। পশ্চিমবঙ্গে সে তুলনায় কিছুই দেখিনি। বলতে দ্বিধা নেই, মনে মনে আমি বাংলাদেশেরও নাগরিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার জীবনসায়াহ্ন কাটছে মাভাষায় খেয়াল রচনা করে, গেয়ে, শিখিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের সরকার আমার বাংলা খেয়ালকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, যদিও তাদের পেটোয়া এক শিল্পী বাংলা খেয়াল নিয়ে এবং সেই সঙ্গে আমায় বিদ্রূপ করেছেন এবং এই রাজ্যের সরকারঘনিষ্ঠ একটি পত্রিকা সেই বিদ্রূপ ও মগজহীন উদ্ভট বক্তব্য ঘটা করে ছাপিয়েছেন- আমার একটি ব্যঙ্গচিত্রসমেত।’

দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে কবীর সুমন আরও লিখেছেন, ‘আমার জীবনের সেরা কাজ এবং আমার জীবনসায়াহ্নের প্রধান কাজ বাংলা খেয়াল বাংলাদেশে চর্চা করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের শিল্পী মরহুম আজাদ রহমান বেশ কিছু বাংলা খেয়াল রচনা করে গিয়েছেন বিভিন্ন রাগে। বাংলা ভাষা আর বাংলা খেয়ালের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে আমি বাঁধা ভালোবাসার বন্ধনে। গতবার ঢাকায় গানের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে যে সম্মান ও ভালোবাসা পেয়েছি, তা ভারতে পেয়েছি ক’বার?’

কোটা আন্দোলনে সহিংসতাকে ইঙ্গিত করে এই গায়ক লিখেছেন, ‘এহেন আমি বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় চুপ করে বসে থাকতে পারি না। থেকেছি কয়েক দিন। আর পারছি না। কিন্তু অবস্থাটা যে ঠিক কী, কী কী কারণে যে এমন হলো এবং হচ্ছে, কারা যে এতে জড়িত তা-ও তো ঠিকমতো জানি না। তা-ও পঁচাত্তর উত্তীর্ণ এই বাংলাভাষী করজোড়ে সব পক্ষকে মিনতি করছি: অনুগ্রহ করে হিংসা-হানাহানি বন্ধ করুন। ঢাকা সরকারকে অনুরোধ করছি: বাংলা ভাষার কসম, শান্তি রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আপনাদের ছাত্রবাহিনী যেন হিংসার আশ্রয় না নেন। আর কী বলি! আমি তো সশরীরে যেতে পারছি না ঢাকায়। পারলে যেতাম। রাস্তায় বসে পড়ে সকলকে শান্তি রক্ষার জন্য আহ্বান করতাম।’

শেষে একটি স্বরচিত কবিতা জুড়ে দিয়েছেন সুমন। লিখেছেন-

হানাহানি বন্ধ হোক।

বন্ধ হোক উল্টোপাল্টা কথা বলে দেওয়া। বাঁচুক বাংলাদেশ।

বাঁচুন বাংলাদেশের সকলে।

জয় বাংলাদেশ

জয় মুক্তিযুদ্ধ

জয় অসংখ্য বাংলাদেশির শাহাদাত ও অপূরণীয় ক্ষতিস্বীকার

জয় বীরাঙ্গনারা

জয় বাংলা ভাষা!

এদিকে, অন্য একটি পোস্টে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন নিয়ে গান লিখেছেন কবীর ‍সুমন। এর কথাগুলো এমন ‘বিরোধী হলেই রাজাকার! বলে দাও তবে দেশটা কার/ দেশটা কার দেশটা কার!/ বাংলা আমার একাত্তরের, মুক্তির গান রক্তপাত/ বঙ্গবন্ধু আমারও নেতা, কাঁদছে দিন কাঁদছে রাত।’