বিএনপির মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা, বেশ কয়েকজন আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ জুলাই ২০২৪, ১৫:৫৯
শেয়ার :
বিএনপির মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা, বেশ কয়েকজন আটক

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদে আজ বুধবার বাদ জোহর গায়েবানা জানাজা শেষে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা একত্রিতভাবে মিছিল সহকারে বের হলে বাধা দেয় পুলিশ। উত্তর গেইটে দিয়ে বের হওয়ার সময়ে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিপেটা ও  টিয়ারশেল ছোড়ে। একপর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা দৌড়ে গলি থেকে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।

প্রায় ২০ মিনিট এ রকম পরিস্থিতি সাংঘর্ষিক চলতে থাকে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইট থেকে পুরানা পল্টন মোড় পর্যন্ত সড়কে প্রচুর ইটপাকেট পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা আটকসহ কঠোর অবস্থানের মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা আদায় করে বিএনপি ও সমমনা দলের নেতাকর্মীরা। জোহরের নামাজ শেষে মূল মসজিদের উত্তর দিকের বারান্দায় গায়েবানা জানাজা হয়।

জানাজায় অংশগ্রহণ করা বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সহ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেন, ১২টার পরপর গায়েবানা জানাজা নামাজকে কেন্দ্র করে পুলিশ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেটে রণসাজে সজ্জিত হয়ে কঠোর অবস্থান নেয়। এই অবস্থায় সিনিয়র নেতা ছাড়া যারাই প্রবেশ করতে গেছেন, তাদের অনেককেই আটক করা হয়েছে।

 এ কৌশলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে প্রবেশ করে বাবুলসহ অনেক নেতাকর্মী। তিনি বলেন, সাড়ে বারোটা থেকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেটে অবস্থান নিয়ে পুলিশ নেতাকর্মীদের আটক করতে থাকে। এই অবস্থায় বিকল্প অন্য একটি পথ দিয়ে কিছু নেতাকর্মী প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। বাদ জোহর মসজিদের ভেতরেই গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে অংশ নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আহমেদ আজম খান, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শরীফুল আলম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ফজলুল হক মিলন, আমিনুল হক, ডা. রফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম আজাদ, কাজী রওনকুল ইসলাম টিপু, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ডা. শাখাওয়াত হোসেন শায়ন্ত, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার আসাদুর রহমানসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী।

তবে, গ্রেপ্তার এবং পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে বিএনপির ও সমমনা দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে বায়তুল মোকাররমে প্রবেশ করতে না পেরে অলি-গলিতে অবস্থান নেন। এদের মধ্যে ছিলেন গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা সাইফুল হক, রফিকুল ইসলাম বাবলু, জোনায়েদ সাকী, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের শামসুল আলম প্রমুখ।

জানাজা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিষয়টি সরকার নিজেরা সমাধান করতে পারত। কিন্তু পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদে কর্মসূচি দেব।’

বিএনপি নেতারা বলেন, জানাজা শেষে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পল্টন মোড়ে আসামাত্র পুলিশ পেছন দিক থেকে লাঠিপেটা ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, গায়েবানা জানাজা কর্মসূচিতে ব্যবহারের জন্য বায়তুল মোকাররমে নেওয়া মাইক পুলিশ কেড়ে নেয়।

বায়তুল মোকাররম মসজিদে গায়েবানা জানাজায় অংশ নিতে এসে ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ, বিএনপির মহানগর নেতা মাহবুবূর রহমান, আমির হোসেন, নোয়াব আলী, মাসুমসহ বেশ কয়েকজন আটক পুলিশ নিয়ে গেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আটক বাকিদের পরিচয় জানার চেষ্টা করছে বিএনপি।