কোটা আন্দোলন জিইয়ে রেখে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করছে সরকার: রাশেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ জুলাই ২০২৪, ১৬:৫৯
শেয়ার :
কোটা আন্দোলন জিইয়ে রেখে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করছে সরকার: রাশেদ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাবেক নেতারা। আজ সোমবার রাজধানীর পল্টন মোড় সংলগ্ন আলরাজি কমপ্লেক্সে গণঅধিকার পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তারা।

লিখিত বক্তব্যে সাবেক নেতারা বলেন, ‘সরকার পরিকল্পিতভাবে ২০১৮ সালের মীমাংসিত বিষয় সামনে এনে চলমান লুটপাট, আর্থিকখাতের বিপর্যয়, আজীজ- বেনজীর- মতিউরদের দুর্নীতি, ভারতের সঙ্গে রেল চুক্তি ইত্যাদি বিষয়গুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি সফল ছাত্র আন্দোলন। ঐ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ৮ এপ্রিলে থেকে জোরালো আন্দোলনে পরিণত হলে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, আর কোনো কোটা থাকবে না, যেহেতু সংস্কার করলে আবার আন্দোলন হবে, তাই কোটা বাতিল করা হবে।’

রাশেদ খান বলেন, ‘এরপর ঘোষণার দেড় মাসের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে গেজেট প্রকাশ করা হচ্ছিল না। যে কারণে ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। কিন্তু সেখানে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়ে সংবাদ সম্মেলন বানচাল করে দেয়। সেদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক নুরুল হক নুর, হাসান আল মামুনসহ বেশ কয়েজন গুরুতর জখমের শিকার হয়। এরপর থেকে সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার ও দমনপীড়নের শুরু করে সরকার। এতো দমন-পীড়নের পরেও কোটা সংস্কার আন্দোলন বন্ধ করা যায়নি। অবশেষে সরকার বাধ্য হয়ে ৪ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে ছাত্রসমাজের কাঙ্ক্ষিত দাবি পূরণ হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সে সময়ে কোটা বাতিল নয় বরং কোটা সংস্কার চেয়েছিলাম। সেসময় ২ জুলাই সরকার তৎকালীন মন্ত্রীপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেডে কোটা বাতিল করে মেধারভিত্তিতে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু গত ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘কোটা বাতিল আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই।” তাহলে তিনি কেন বাতিল করার কথা বলেছিলেন, শিক্ষার্থীরা তো বাতিল চায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এমন বক্তব্য কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। ২০১৮ সালে যারা কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছে, তারাই পরবর্তীতে মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছে। যারা সংগঠক পর্যায়ে ছিলেন, তাদের নামে মোট ৬টি মামলা দেওয়া হয়। যে মামলাগুলোতে তাদের এখনো হাজিরা দিতে হচ্ছে, কোন কোন মামলায় চার্জশিট দিয়েছে, বিচার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে যেখানে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি করা হয়, সেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠকদের চাকরি পাওয়ার কোনো সুযোগ রাখা হয়েছে? বরং তারা যাতে চাকরি না পায় এ জন্য তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন-২০১৮ এর সংগঠকরা নিজেদের একাডেমিক ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে, হাজারো শিক্ষার্থীর কোটামুক্ত চাকরির সুযোগ নিশ্চিত করেছে। তারা তাদের জীবনের লক্ষ্য পরিবর্তন করে এখন রাষ্ট্র সংস্কার বা মেরামতের কাজে নিযুক্ত হয়েছে। যারা সংগ্রাম করে, তারাই সবসময় ভোগ করবে, এটি তো কোনো আন্দোলনের শর্ত হতে পারে না। বরং এটিই হয়ে আসছে, যারা ত্যাগ করে তারা ভোগ করতে পারে না। আর ছাত্রলীগের সভাপতি ৯ বছরে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। এরমধ্যে ৫ বছরই তিনি ফেল করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী যার ছাত্রত্বই থাকার কোনো সুযোগ নেই, তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কেউ চাকরি পায়নি বলে মিথ্যাচার করেছে। সারাদেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছে, তাদের অধিকাংশ এখন চাকরি করছে।’

সাবেক নেতারা আরও বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, আমরা এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি। তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান, ২০১৮ সালে অসংখ্য শিক্ষার্থী ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সফলতা ধরে রাখা আপনাদের দায়িত্ব। আমরা আপনাদের সঙ্গে রয়েছি, ইনশাআল্লাহ আপনারা সফল হবেন, ছাত্র আন্দোলন কখনোই বৃথা যেতে পারেনা। একইসঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে পুলিশি মামলা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি। সরকারকে বলব, শিক্ষার্থীদের উষ্কে না দিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার না করে, তাদের প্রতি অপমানমূলক শব্দ প্রয়োগ না করে তাদের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’