‘থালাবাটি বেঁচে কোরমা-পোলাও খেলে ব্যাংক টিকবে না’
ব্যাংকে আমানতের অর্থ লুটে খাওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, ‘এখন ঋণ আদায় না করেই ঋণের সুদকে আয় দেখিয়ে মুনাফা দেখাচ্ছে ব্যাংক। সেই মুনাফার অর্থ থেকে লভ্যাংশও দিচ্ছে। সরকারও ট্যাক্স পাচ্ছে। বাস্তবে ব্যাংকের কোন আয়ই হয়নি।’
‘আমানতের অর্থ লুটে খাওয়া হচ্ছে। এর মানে ঘরের ‘থালাবাটি বেঁচে কোরমা-পোলাও খাওয়া হচ্ছে’। এভাবে আর কতদিন ব্যাংক চলবে’, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আজ শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরাবস্থার কারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ অর্থনীতিবিদ এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন:
সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিতে অনীহা ব্যাংকের
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এতে আমানত শেষ হয়ে যাবে কিন্তু গ্রাহকের অর্থ আর ফেরত দিতে পারবে না।’
ইআরএফ সম্পাদক আবুল কাশেমের পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। অনুষ্ঠানে ব্যাংককিং খাতের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সমকালের বিশেষ প্রতিবেদক ওবায়দুল্লাহ রনি এবং প্রথম আলোর জৈষ্ঠ প্রতিবেদক সানাউল্লাহ সাকিব।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আর্থিক খাতের ক্লিনিং করতে হবে। ব্যাংক খাতের সমস্যাগুলো সমাধান না করে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ঘরের দুগন্ধযুক্ত ময়লা ঝাড়ু দিয়ে কার্পেটের নিচে রেখে দিচ্ছে। এতে করে আসলে দুগন্ধ দূর হয় না, কোন না কোন একদিন আবারও দুগন্ধ ছড়াবে। অনিয়মের তথ্য বিভিন্নভাবে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু এসব তথ্য লুকিয়ে রাখার কারণে ব্যাংকখাতের অনিয়মের দুর্গন্ধ পুরো অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাংকে মন্দ ঋণ, অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ পাচার লুকিয়ে রেখে এখাতের সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে না। এজন্য আর্থিক খাতের পরিস্কারের (ক্লিনিং) উদ্যোগ নিতে হবে। এ উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকেও থাকবে।’
আরও পড়ুন:
ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম
তিনি বলেন, ‘শুধু রপ্তানির তথ্য লুকানো হয় কি? সবচেয়ে বেশি তথ্য লুকানো হচ্ছে আর্থিক খাতে। অথচ আর্থিক খাতেই সঠিক তথ্য সবচেয়ে বেশি জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে এখন ১১ শতাংশ। বাস্তবে খেলাপি বা মন্দ ঋণ ২৫ শতাংশ। এভাবে আর্থিক খাত বেশি দিন চলতে পারে না। তদারকির অভাবে আমাদের মুদ্রা বাজার হাতছাড়া হয়েছে, মূল্যস্ফিতীও আমাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে।’
এসময় তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতকে ঘুনে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অনিয়ম বেড়েছে এবং আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, ব্যাংক নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না। তাহলে আমানকারীদের আমানতের সুরক্ষা দিবে কিভাবে?’
ব্যাংকখাত নিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, সরকার পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করে যে প্রশংসা অর্জন করেছে তা আজ ম্লান হয়ে যাচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণ ও আর্থিক কেলেঙ্কারিতে। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসাবে এ দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর বর্তায়। এসব বিষয়ে এখনই উদ্যোগ না নিলে দেশের ব্যাংক খাতে বড় ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হবে।