দুই মাদ্রাসা ছাত্রের ভারতে প্রবেশ, পতাকা বৈঠকের পর হস্তান্তর
যশোরের চৌগাছায় তাবলীগ জামায়াত থেকে ভারত দেখার আশায় আবদুল্লাহ (১৭) ও ওবায়দুল্লাহ (১৭) নামে দুই মাদ্রাসা ছাত্র সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যায়। পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) আহ্বানে পতাকা বৈঠক শেষে আজ শুক্রবার রাত সাড়ে আটটায় বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। পরে বিজিবি তাদেরকে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ অভিভাবকদের জিম্মায় হস্তান্তর করে।
আব্দুল্লাহ মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া গোড়াখালী পোড়াবাড়ির বাসিন্দা ও ওবায়দুল্লাহ গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ি উপজেলার নীলনগর আমবাগান গ্রামের বাসিন্দা। তারা চৌগাছার ফুলসারা ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম হামিউস সুন্নাহ কওমী মাদ্রাসার ছাত্র।
জানা গেছে আজ ভোর ছয়টার দিকে উপজেলা ধুলিয়ানী ইউনিয়নের শাহাজাদপুর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্পের পাশের কাবিলপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদ পার হয়ে ভারতের মধ্যে প্রবেশ করে। পরে রাত সাড়ে আটটায় ভারতের লক্ষীপুর বিএসএফ ক্যাম্পের অধীন বয়রা সীমান্ত চৌকিতে পতাকা বৈঠক শেষে তাকে শাহাজাদপুর বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর বিজিবি ধুলিয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম মোমিনুর রহমান ও কাবিলপুর গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে ওবায়দুল্লাহর বাবা আব্দুর রহমান ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
চৌগাছার আড়ারদাহ হামিউচ্ছুন্নাহ কওমী মাদ্রাসার ছাত্র ও তাবলীগ জামায়াতের আমির মাওলানা নূরুজ্জামান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টার জন্য মাদ্রাসার কিছু ছাত্র নিয়ে আমার নেতৃত্বে উপজেলার ধুলিয়ানী ইউনিয়নের বড় কাবিলপুর গ্রামের কাবিলপুর বড় জামে মসজিদে তাবলীগ জামায়াতে আসি। আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে আমাদের মাদ্রাসায় ফেরত যাবার কথা ছিল। কিন্তু ফজরের নামাজের পর কৌতুহল বশতঃ তাবলীগ জামাতের দুইজন সদস্য আব্দুল্লাহ ও ওবায়দুল্লাহ মসজিদের পাশেই অবস্থিত কপোতাক্ষ নদ পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। পরে বিএসএফ তাদের ধরে নিয়ে যায়। আমরা স্থানীয় বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিজিবি বিএসএফএর সঙ্গে যোগাযোগ করে রাত সাড়ে আটটায় তাদেরকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে।’
ওবায়দুল্লাহ জানায়, ‘আমরা ভেবেছিলাম কাটাতারের বেড়া পর্যন্ত যাব। এপার থেকে ভারত দেখব। তবে ওই অঞ্চলে যে কাটাতারের বেড়া নেই সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। পরে ভারতের মধ্যে যেতে যেতে দুজন মহিলা ও এক পুরুষের সঙ্গে দেখা হলে তারা জানতে চায় কোথায় যাব। আমরা বলি ভারত দেখতে এসেছি। তারা আমাদের বলে আজ শুক্রবার বিএসএফ তেমন আসে না। তোমরা তাড়াতাড়ি দেখে চলে যাও। আমরা হাটতে থাকলে হঠাৎ বিএসএফ সদস্যরা আমাদের ঘিরে ফেলে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে অনেক বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে বিজিবির সঙ্গে মিটিংয়ের পর আমাদের বিজিবির কাছে ছেড়ে দেয়।’
শাহাজাদপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার শওকত আলী বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা বিএসএফএর সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে সন্ধ্যায় বিএসএফএর আহ্বানে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মাদ্রাসার ছাত্রদের আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন তারা। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারের উপস্থিতিতে তাদের অভিভাবক ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
ধুলিয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এসএম মোমিনুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সকালে দুই জন মাদ্রাসার ছাত্র ভারতে ঢুকে পড়ে। পরে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের পর তাদেরকে অভিভাবক ও শিক্ষকদের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।’
আজিজুর রহমান
০১৭১৩৯০৬১৬৬