রেললাইন অবরোধ করেছেন রাবি শিক্ষার্থীরা
কোটা সংস্কারের একদফা দাবিসহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে তৃতীয় দিনের মত রেলপথ অবরোধ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকার রেলপথ অবরোধ শুরু করেন তারা। বিকেল ৬টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রেলপথ অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিকেল ৪টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে রেলপথ অবরোধের সিদ্ধান্ত নেন তারা। এরপর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সেখান থেকে মিছিলসহ রেলস্টেশনে গিয়ে ৫টার দিকে অবরোধ শুরু করেন তারা।
আন্দোলনকারীদের দাবি সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে নূন্যতম পর্যায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ করে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে।
অবরোধ চলাকালীন ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘১৮ এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠায় নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ বিভিন্ন স্লোগানে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলন মিশিলে আসা ছাত্র তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘গতকাল চট্টগ্রাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রেললাইন অবরোধ করা হয়েছে।’
দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব ধরনের চাকরির ক্ষেত্রে আদিবাসী, প্রতিবন্ধী এবং পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ রাখতে হবে। তা দ্রুত সংসদীয় বৈঠকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।’
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমাদের দাবি হলো, সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে শুধুমাত্র আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী কোটা রেখে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রাখতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার করতে হবে। এছাড়া, কোটা সংস্কার আন্দোলন করার কারণে রাবিতে এক শিক্ষার্থীকে মেরে হল থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। তাকে সসম্মানে হলে তুলে দিতে হবে এবং এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার করতে হবে।’
অবরোধ কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, সারাদেশের মত কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ৬ জুন থেকে আন্দোলন করে আসছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। এর আগে ৮ ও ১১জুলাই রেলপথ অবরোধ করেছিলেন রাবি শিক্ষার্থীরা। এছাড়া মানববন্ধন, সমাবেশ ও মহাসড়ক অবরোধের মত কর্মসূচি পালন করেছে তারা।