‘সন্তানকে আমার বুকে ফেরত চাই’
ছাত্রদলের নিখোঁজ নেতা আতিকুর রহমান রাসেলকে উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন তার বাবা আবুল হোসেন সরদার। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অনুরোধ জানান তিনি।
আবুল হোসেন সরদার বলেন, ‘আমি প্রশাসনের কাছে আমার ছেলেকে উদ্ধারে সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই। আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দেবে, এটাই আমার কামনা।’
রাসেলের বাবা বলেন, ‘আমি জানি না আমার বাবারে (রাসেল) কী করেছে। আমার বাবা কোথায় আছে? আমি জানি না, আমার বাবা ১১ দিন যাবৎ কী খায়, কোথায় আছে, কেমন আছে। আমি কাউকে দোষারোপ করি না। আমি আমার সন্তানকে আমার বুকে ফেরত চাই।’
তিনি বলেন, ‘ওর (রাসেল) মা নাই। মা-হারা সন্তান আমার। কী অপরাধ আমার বাবার? জীবনে একটা ককটেল মারে নাই, একটা ছুরি হাতে নেয় নাই। কোনো মানুষকে একটা ঢিল মারে নাই। রাজনীতি করে—এটা যদি অপরাধ হয়ে থাকে, আমার বলার কিছু নাই।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘রাসেলের সন্ধান দাবিতে তার পিতার যে আকুতি আমরা এখানে শুনলাম, এভাবেই বাংলাদেশের আকাশে প্রতিনিয়ত অসংখ্য উল্কাপাত ঘটিয়েছে এই ডামি সরকার, দখলদার সরকারের প্রধানমন্ত্রী। আমরা কোন দেশে বাস করি? এমন একটি দেশ, যেখানে মনে হচ্ছে চারদিকে পাহাড়ের গুহা, সেই পাহাড়ের গুহা থেকে দস্যুদল এসে কোমলমতি ছাত্রদের ধরে নিয়ে যাবে, তরুণদের ধরে নিয়ে যাবে, নিরুদ্দেশ করে দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ আতিকুর রহমান রাসেল নেই আমাদের কাছে। সবাই জানে, তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। খবরের কাগজেও এসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরাই তাকে ধরে নিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো তাকে হাজির করছে না আদালতে, আর না তার পরিবারের কাছে। মা-হারা একটি ছেলে কোথায় খাচ্ছে, কোথায় ঘুমাচ্ছে, কোন জায়গায় শুয়ে আছে, কোন আয়নাঘরে তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে—আমরা জানি না।’
রিজভী বলেন, ‘গুমের পারমানেন্ট সংস্কৃতি তৈরি করেছে এই মাফিয়া সরকার। শুধু নিজের সিংহাসন রক্ষা করার জন্যই আজ তিনি (প্রধানমন্ত্রী) গুম-খুনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। কারণ, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হচ্ছে শেখ হাসিনার জন্য। এই আতঙ্ক থেকে নিজেকে নিরাপদ করার জন্য জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও গণতন্ত্রকামী নেতাদের তিনি গুম করাচ্ছেন।’
এ সময় কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে আবার কেন আদালতে নিয়ে আসলেন? শেখ হাসিনার সঙ্গে আদালতের টেলিপ্যাথিক সম্পর্ক। কারণ তার ইচ্ছা এবং তিনি যা চান তা আদালতের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। ছাত্রদের আন্দোলন যৌক্তিক, কিন্তু তা মানতে পারছে না সরকার।’
প্রধানমন্তীর চীন সফর নিয়ে তিনি বলেন, ‘চীনে গিয়ে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ২০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চাইলেন সরকারপ্রধান। কিন্তু চীন থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন মাত্র এক বিলিয়ন ডলারের। চীন সফর সংক্ষিপ্ত করে অজুহাত দিচ্ছেন এক আর অন্তর্নিহিত আছে অন্য কারণ। দেশে দুর্নীতি-লোপাটে সবাই নিমজ্জিত। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব চোর-দুর্নীতিবাজ।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার