স্বাস্থ্যে নন-ক্যাডারদের সব পদোন্নতি বাতিল চান ক্যাডাররা
বিধি ভেঙে স্বাস্থ্যখাতে নন-ক্যাডারদের ক্যাডার পদে পদায়ন ও পদোন্নতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে জটিলতা। নিয়মনীতি না মেনে কয়েকশ অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া নন-ক্যাডার কর্মকর্তাকে ক্যাডারের পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। যার বিরুদ্ধে রিট এখনো বিচারাধীন। বিধিবহির্ভূত এসব পদোন্নতিকে বৈধ করতে সম্প্রতি এসব চিকিৎসককে বিশেষ সুবিধা দিতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে স্বাস্থ্য ক্যাডাররা।
ক্যাডার পদে নন-ক্যাডারদের পদায়ন ও এসব পদোন্নতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। সেই সঙ্গে নন-ক্যাডারদের সব ধরনের পদোন্নতি বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্যাডাররা চিকিৎসকেরা।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়েছে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের আহ্বায়ক ডা. মোহাম্মদ নেয়ামত হোসেন সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে ডা. নেয়ামত হোসেন বলেন, ‘দেশের প্রত্যন্ত ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র পর্যন্ত পদায়ন হওয়া এই ক্যাডারের প্রায় ৩৫ হাজার কর্মকর্তা দেশের স্বাস্থ্য বাবস্থার মূল মেরুদণ্ড। ক্যাডার সার্ভিস গঠন হওয়ার পর থেকে বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে আমরা দেশের মানুষকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে আসছি এবং শত সীমাবদ্ধতা, বৈষম্য ও অপ্রাপ্তি স্বত্বেও আমরা দেশের জনগণকে সেবা প্রদানে কখনো পিছপা হইনি।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তিনি বলেন, ‘কিন্তু বিগত কিছু বছর যাবত আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সরকারি চাকরীবিধির গুরুতর লঙ্ঘণ ঘটিয়ে ক্যাডার পদসমূহে ভিন্ন নিয়োগবিধির আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাডহক ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের পদায়ন ও পদোন্নতি দেওয়া শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু দুষ্কৃতিকারী কর্মকর্তা। এতে চাকরীবিধির গুরুতর লঙ্ঘন হওয়ায় আমরা লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়ে প্রক্রিয়াগতভাবে আগাতে থাকি। তবে এসব শাখাসমূহের কর্মকর্তাদের অনিয়ম থেকে বিরত রাখা যায়নি। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ভুয়া পদোন্নতি, জনপ্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে প্রায় ৫ শতাধিক ভুয়া পদায়ন, ক্যাডার কর্মকর্তাকে অ্যাডহকদের অধীনস্ত করার ঘটনা ঘটেছে।’
বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক বলেন, ‘অত্যন্ত উদ্বেগের হওয়ায় ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি আমরা। মামলায় রুল জারি থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের ওই চিহ্নিত অনিয়মকারী শাখার কর্মকর্তারা অ্যাডহক ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের পক্ষে অবৈধ ও বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি আদেশ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদায়ন শাখা পুনরায় অবৈধ পদায়ন আদেশ জারি করে। এসব অনিয়মের মাঝেই গত বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পরপর পাঠানো তিনটি চিঠি আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় আমরা হতবাক ও বাক্রুদ্ধ হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘অসংখ্য ভুয়া তথ্য, মিথ্যা তথ্য, তথ্য গোপন ও ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পার-২ শাখার তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ২০২২ সালে অ্যাডহক ও প্রকল্প থেকে নন-ক্যাডার হওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে চাকরিতে পদোন্নতির জন্য সকল ধরনের পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ মাফ করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠান এবং উক্ত পত্রসমূহেই তাদের ইতোপূর্বে দেওয়া বিতর্কিত পদোন্নতিসমূহকে অবৈধ বলে স্বীকার করে নেন। মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব পত্রে তাদেরই করা অনিয়মসমূহ স্বীকার করে নেওয়া নজীরবিহীন।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
ডা. নেয়ামত হোসেন বলেন, ‘এই ধরনের ন্যাক্কারজনক অনিয়মের ঘটনা দেশের প্রশাসন জগতের ইতিহাসে এটাই প্রথম। আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সরকারি কর্মকমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব অনিয়মমূহ লিখিত আকারে জমা দিয়েছি। কিন্তু সব প্রমাণ থাকার পরও প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি ওই প্রমার্জনার ফাইলে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। যা আমাদের স্বাস্থ্য ক্যাডারের সঙ্গে চরমতম অন্যায়।’
তিনি বলেন, ‘ আমাদের দাবি, সব ধরনের অবৈধ পদোন্নতি, পদায়ন বাতিল করতে হবে এবং চলমান প্রমার্জনার সব প্রক্রিয়া স্থায়ীভাবে বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’