সবকিছুর আগে চাওয়া শিল্পীসত্তাকে খুশি রাখা
কাজী নওশাবা আহমেদ। আগামী ১৩ জুলাই কলকাতার নন্দনে প্রদর্শিত হবে তার অভিনীত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘ছাড়পত্র’। এ ছাড়া সম্প্রতি তিনি ‘ছোঁয়া’ নামের একটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। সাম্প্রতিক ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় এ অভিনেত্রীর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- জাহিদ ভূঁইয়া
প্রশ্ন: ‘সপ্তম সাউথ এশিয়ান শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ আপনার অভিনীত ‘ছাড়পত্র’ প্রদর্শিত হচ্ছে। কেমন লাগছে?
কাজী নওশাবা: এই সিনেমা আমার জন্য ভীষণ স্পেশাল। কারণ ২০১৮ সালে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর ‘ছাড়পত্র’ দিয়েই অভিনয় ফিরেছিলাম। আবার উৎসবে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র এটিই অংশ নিচ্ছে। সব মিলিয়ে ভালো লাগাটা অন্যরকমের।
প্রশ্ন: সিনেমার গল্প ও আপনার চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাই।
কাজী নওশাবা: এক দম্পতি, দুজন দুজনকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। তাদের ভেতর কোনো পারিবারিক অশান্তি, পরকীয়া, সহিংসতা বা অন্য কোনো সমস্যা নেই। সব ঠিকঠাক। কিন্তু তারপরও ওই নারী বিচ্ছেদ চান। আইনজীবীর প্রশ্নের পর প্রশ্নে উঠে আসে অদ্ভুত এক অনিরাপত্তা বোধ। পর্দায় দেখা যায় তনু, নুসরাত, রুপা, আয়েশা মনি, রত্না খাতুনদের। উঠে আসে দুই বছরের শিশু থেকে শতবর্ষী বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী, রোগী, অন্তঃসত্ত্বা নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা। এখানে আমি যে চরিত্রটা করেছি, এটা বাংলাদেশের যে কোনো নারীর চরিত্র। একজন নারী হিসেবে যেসব অনিশ্চয়তায় ভুগছি, সেগুলোই চরিত্রের ভেতর দিয়ে প্রশ্ন আকারে ছুড়ে দিয়েছেন নির্মাতা অপরাজিতা সংগীতা।
প্রশ্ন: ‘ছোঁয়া’র শুটিং কবে শুরু হবে?
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
কাজী নওশাবা: ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শাখায় সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এ ছবির শুটিং চলতি বছরের নভেম্বরে শুরু হবে। এর প্রযোজক ও পরিচালক রাকিবুল হাসান।
প্রশ্ন: চলচ্চিত্রের অন্যান্য কাজের কী খবর?
কাজী নওশাবা: দুটি সিনেমার কাজ করছি। দুটিরই অল্প কিছু শুটিং বাকি রয়েছে। একটার নাম এখন প্রকাশ করা যাবে না, নির্মাতার অনুরোধ রয়েছে। হয়তো তার নিজস্ব কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। আরেকটি যে সিনেমা করছি, এটার পরিচালক আবরার আতাহার। এটার শুটিং প্রায় শেষ। দুয়েক দিন করলেই সম্পন্ন হবে।
প্রশ্ন: কলকাতার ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ সিনেমার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বলুন।
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
কাজী নওশাবা: সিনেমায় আমি কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছি। সিনেমাটি আমার জন্য অনেক বড় পরীক্ষা ছিল। কতটা পাস করতে পারলাম, সেটা দর্শক বলবেন। এমন চরিত্রে সুযোগ দেওয়ার জন্য পরিচালক অনিক দত্তের কাছে কৃতজ্ঞতা। সিনেমাটির শুটিং ও ডাবিং অনেক আগেই শেষ হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের শীতেই এটি মুক্তি পাবে। শুনেছি, দুই বাংলার প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রশ্ন: মঞ্চে ফিরছেন কবে?
কাজী নওশাবা: চলতি মাসের ২৩ জুলাই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে আরশিনগরের চতুর্থ প্রযোজনা ‘সিদ্ধার্থ’-এর প্রদর্শনী আছে। হেরমান হেসের লেখা একই নামের উপন্যাসকে নাট্যরূপ দিয়েছেন রেজা আরিফ। নির্দেশনাও তারই। এটা দারুণ একটা উপন্যাস। আত্মোপলব্ধির গল্প। উপন্যাসটা যতবার পড়েছি, ততবারই মনে হয়েছে- এটা নিয়ে এত দিন কেন কাজ হলো না। প্রযোজনাটির সঙ্গে থাকতে পারাটা আমার কাছে রীতিমতো ভাগ্যের ব্যাপার।
প্রশ্ন: ‘টুগেদার উই ক্যান’ নামে একটি নাট্যদল গঠন করেছিলেন। এখন পর্যন্ত কয়টি নাটক এলো?
আরও পড়ুন:
‘এভাবে বিয়ে করা নাকি অর্থহীন’
কাজী নওশাবা: তিনটি নাটক এসেছে। ‘মুক্তি আলোয় আলোয়’, ‘রিয়া গার্ল উইথ আ হোয়াইট পিজন’ এবং সর্বশেষ ‘ত্রিবেণী’। তিনটি নাটকের শিল্পীই বিশেষ চাহিদাসম্পন্নরা। তিনটি নাটকেরই আমি নিয়মিত শো করতে চাই, যার প্রতিটিতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিল্পীরা থাকবে।
প্রশ্ন: শিল্পীজীবন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
কাজী নওশাবা: সবকিছুর আগে চাওয়া একটাই- শিল্পীসত্তাকে খুশি রাখা। তাই সে কাজই বেছে নিই, যা শেষ করার পর অন্য রকম আত্মতৃপ্তি মেলে। সত্যি বলতে কী, যশ-খ্যাতির নেশায় যে কোনো কিছু করার ইচ্ছাও কখনো হয়নি। এ জন্যই স্রোতের বিপরীতে চলেছি সব সময়। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনো কিছুর মোহে নিজের এই সিদ্ধান্ত বদলাব না।