কুয়াকাটায় হোটেলের ‘মালিক দাবি’ আবেদ আলীর, জানা গেল ভিন্ন কথা

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা
০৯ জুলাই ২০২৪, ১১:২৬
শেয়ার :
কুয়াকাটায় হোটেলের ‘মালিক দাবি’ আবেদ আলীর, জানা গেল ভিন্ন কথা

বিসিএস পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের অন্যতম সদস্য পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন নিজেকে কুয়াকাটার একটি আবাসিক হোটেলের মালিক হিসেবে দাবি করেছেন। গত মে মাসের ১৮ তারিখ আবেদ আলী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কুয়াকাটায় তার মালিকানাধীন সান মেরিনা নামের আবাসিক হোটেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন বলে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। ইতোমধ্যে তার স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হয়েছে।

ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘আমাদের নতুন হোটেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা। সমুদ্রকন্যার পাড়ে আজীবন নিজের জন্য একটা থাকার ব্যবস্থা ও একই সঙ্গে একটা হোটেলের মালিকানা অর্জন করতে আপনিও শেয়ার কিনতে পারেন। শেয়ার কিনতে যোগাযোগ করুন।’

এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে হোটেল ‘সান মেরিনা’ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে কুয়াকাটা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাঞ্জুপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর টিনসেড দুইটি ছোট ভবনে মাত্র ছয়টি রুম দিয়ে চলছে হোটেল সান মেরিনার কার্যক্রম। সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা রয়েছে চারপাশ। ভিতরে বহুতল কোনো ভবনের নির্মাণকাজ এখনও শুরু হয়নি।

হোটেলের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমি বিগত ৮ বছর ধরে এখানে চাকরি করছি। আবেদ আলী নামে আমাদের কোনো মালিক নেই। গত ৩/৪ মাস আগে তিনি একদিন আমাদের হোটেলে এসে শেয়ার কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে আমি তাকে ঢাকা হেড অফিসে যোগাযোগ করতে বলি। ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারলাম তিনি এই হোটেলের মালিক। আমাদের হোটেল সান মেরিনার মালিকের নাম মোশাররফ হোসেন, তিনি একজন ঠিকাদার। হোটেলের শেয়ার বিক্রি করার জন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে একটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছিল, আবেদ আলী সেই সাইনবোর্ডের ছবি তার ব্যক্তিগত আইডিতে দিয়ে নিজেকে মালিক হিসেবে দাবি করেছেন। এমনটি কেন লিখেছেন সেটা আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে হোটেল সান মেরিনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি আবেদ আলী নামের এই লোককে চিনি না, তার সাথে আমার কখনো দেখা হয়নি। আমি সান মেরিনা হোটেলের মালিক। ২০১০ সালে ৪০ শতাংশ জায়গা আমি কিনি এবং ব্যাংক লোন এর জন্য চেষ্টা করছিলাম। বেশ কয়েক মাস আগে হোটেলের শেয়ার বিক্রি করব এজন্য একটি সাইনবোর্ড দিয়েছিলাম। আবেদ আলী সেই সাইনবোর্ডের ছবি ফেসবুকে দিয়ে মালিক দাবি কেন করেছেন সে বিষয় আমি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব। আমার ম্যানেজারের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ৩/৪ মাস আগে আবেদ আলী হোটেলের শেয়ার কেনার বিষয়ে কুয়াকাটা অফিসে যোগাযোগ করেছিলেন। শেয়ার কিনতে এসে তিনি নিজেকে মালিক বলে ফেসবুকে পরিচয় দিয়েছেন।’

ইতোমধ্যে হোটেল সান মেরিনা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন সান মেরিনা কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ঝামেলায় জড়াতে চান না দেখেই আবেদ আলীর মালিকানা অস্বীকার করছেন বা গোপন রাখার চেষ্টা করছেন।

সৈয়দ আবেদ আলী সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আবদুর রহমান মীরের ছেলে। ঢাকায় তার ৭ তলা এবং ১১ তলা বিশিষ্ট দুটি বাড়ি রয়েছে। ৭১ শতক জমিতে মসজিদ এবং ঈদগাহ করেছেন তিনি। নিজ এলাকায় বাড়ি করেছেন প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ করে। মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন আবেদ আলী।

গতকাল সোমবার সৈয়দ আবেদ আলীসহ প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।