বাংলাদেশে ফেলে যাওয়া পাকিস্তানিদের অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে যায় ভারত: অলি
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, ‘যুদ্ধের পর প্রায় লক্ষাধিক পাকিস্তানি সেনা সদস্যের ফেলে যাওয়া সব অস্ত্র, গোলাবারুদ, যানবাহন ও অন্যান্য সামগ্রী এবং বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার মেশিন ইত্যাদি ভারতের সেনাবাহিনী নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার তখন একটি টু-শব্দ পর্যন্ত করার সাহস পায়নি। প্রথম দিন থেকে আওয়ামী লীগ ভারতের সেবাদাস হিসাবে কাজ করে আসছে, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অপমানজনক।’
আজ রবিবার রাজধানীর মগবাজারের এলডিপি কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
কর্নেল অলি আহমদ বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীন দেশটি কেউ আমাদের উপহার হিসেবে দেয়নি। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। ভারত পেয়েছে দ্বিখণ্ডিত পাকিস্তান। আমরা উভয়ে নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছি। সুতরাং হিসাব সমান-সমান।’
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক সই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই অবৈধ সরকারের কোন এম.ও.ইউ. স্বাক্ষর করার সাংবিধানিক অধিকার নাই। কারণ তারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি নয়। বিশেষ করে, অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে যে এম.ও.ইউ. স্বাক্ষর করেছে, তাতে দেশের জন্য অনেকগুলি ক্ষতিকর, সংবেদনশীল এবং স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে। আওয়ামী লীগ যেনতেনভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। দেশের এবং জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতার বালাই নাই। তাদের কারণে দেশে ন্যায়বিচার নির্বাসিত, মানবাধিকার পদদলিত।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেন, ‘এই অবৈধ সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে, দলীয় নেতাকর্মী এবং সেবাদাস কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নির্বিবাদে দুর্নীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করাসহ অনেকগুলি আইন-বহির্ভূত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে। তারা সবসময় বলেন, দেশের উন্নতি করার জন্য আমার ক্ষমতা চাই। কিন্তু বাস্তবতা এবং তাদের আচরণ দুইটাই ভিন্ন। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বারবার জাতির সামনে বলেছেন যে, আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, তা তারা কখনও ভুলতে পারবে না। কয়েকদিন পূর্বে তিনি আরও বলেছেন যে, ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে অবাধে যাতায়াত বিদ্যমান রয়েছে। এতে কি তাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে? তাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ে নাই। কারণ তারা এক দেশ অন্য দেশের ব্যাপারে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না। বিশেষ করে, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নির্বাচন, রাজনীতি এবং অর্থনীতির ব্যাপারে তো নয়ই। তাদের নাগরিকদের এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য ভিসারও প্রয়োজন হয় না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কি সেই ধরনের অবস্থা বিরাজ করছে? মোটেও না। ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো বক্তব্য নাই। আমার জানামতে, ভারতের রেলওয়েতে শক্তিশালী গোয়েন্দা ইউনিটসহ প্রায় ৮০ হাজার অস্ত্রধারী সদস্য রয়েছে। বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে ভারতের রেল লাইন স্থাপিত হলে, ভারতের রেলওয়ের এই ৮০ হাজার অস্ত্রধারী এবং শক্তিশালী গোয়েন্দাদের বাংলাদেশ কীভাবে সামাল দেবে? বর্তমান ভারত সরকার, বাংলাদেশের অবৈধ সরকারকে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখে, একে একে বিগত ১৫ বছরে একতরফাভাবে তাদের স্বার্থ হাসিল করে নিয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলিকে সুকৌশলে পঙ্গু করে দিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার ষড়যন্ত্রে অনেকাংশে তারা সফল হয়েছে।’
এলডিপির প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘একেতো আমাদের কৃষিযোগ্য জমি খুবই কম, তার ওপর ভারতের এই রেললাইন, বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে চলাচলের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হলে, তা এদেশের মানুষ মেনে নেবে না। আমাদের সবাইকে আল্লাহর নিকট ফিরে যেতে হবে। সেই বিষয়টি তাদের আদৌ স্মরণ নাই। তারা লোভের মধ্যে আটকে গেছে। তাদের ক্ষমতার নেশা দেশ এবং জনগণকে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছে। তাই এখন দেশকে তাদের হাত থেকে মুক্ত করা অত্যাবশ্যক। আমাদের উচিত হবে সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। আমরা কারো ক্ষতি করব না। ইসলাম ধর্মও তা শিক্ষা দেয় না। প্রকৃত মুসলমান কখনও কারও অমঙ্গল কামনা করতে পারে না। মানুষ চিন্তা করে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সিদ্ধান্ত নেন। ক্ষমতা কখনো চিরস্থায়ী নয়।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালে অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করে, আমরাও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারতাম, কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, পুনঃনির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিলেন। আপনারাও ২০১৪ সালে পুনঃনির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয় হলো, আপনাদের কথা এবং কাজের মধ্যে কখনও কোনো মিল নাই। আপনারা সব সময় সুযোগের সন্ধানে থাকেন। দেশের ও জনগণের কথা মোটেও আপনাদের মস্তিষ্কের মধ্যে নেই। শুধু চাই হালুয়া-রুটি আর মসনদ। মনে রাখবেন, সামনে চরম দুঃসময় অপেক্ষা করছে। এখন সময় হয়েছে, সম্মানের সঙ্গে বিদায় নেন।’
সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, ড. নেয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজি প্রমুখ।