সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আমাদের প্রতিকূলতা সৃষ্টি করছে: ডিএসসিসি মেয়র
জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিদস্যুদের আগ্রাসন এবং সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা প্রতিকূলতার সৃষ্টি করছে বলে জানালেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। আজ সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সম্মেলন কক্ষে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসন করতে হলে খালগুলো পুনরুদ্ধার এবং দীর্ঘস্থায়ীভাবে দখলমুক্ত রাখার আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু খালের জমিতে সরকারি-বেসরকারি দখলদারদের আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ না হলে জলাবদ্ধতাও পুরোপুরি দূর করা যাবে না।’
শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘শ্যামল দত্ত (ভোরের কাগজ সম্পাদক) সাহেব বলেছেন হাতিরঝিলের খালি জায়গা কীভাবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আমি ওই ব্যাপারে আর না বলি। কিন্তু এই সব আগ্রাসন, ভূমিদস্যুদের আগ্রাসন, সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দিনদিন আমাদের সামনে আরও প্রতিকূলতা সৃষ্টি করছে। এ থেকে পরিত্রাণ না পাওয়া পর্যন্ত পূর্ণরূপে আমরা জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারব, এটা বলা যায় না।’
তিনি বলেন, ঢাকার পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এতে কাজ করা সহজ হয়েছে।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার জলাবদ্ধতা ৭০ শতাংশ কমেছে। বাকি ত্রিশ শতাংশ দূর করতে কাজ করছেন বলে জানান।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তিনি বেলেন, ‘কারণ হলো আমরা খালগুলো, নর্দমাগুলো পেয়েছি। একটি জায়গায় আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছি, পরিকল্পনা করতে পারছি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারছি। এর আগে যেভাবে ছিল তাতে কোনোভাবেই সমন্বয় করা সম্ভব ছিল না।’
শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ২০২১ সালে ডিএসসিসি এলাকায় ১৬১টি স্থান চিহ্নিত করে ১৩৬টি জায়গার জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে। নতুন করে ৫০টি জায়গা চিহ্নিত করেছেন।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘ওয়াসা থেকে পাওয়া ১১টি খালের মধ্যে জিরানি, মান্ডা, শ্যামপুর এবং কালুনগর খাল গুরুত্বপূর্ণ। খালগুলো নিয়ে এরইমধ্যে একটি প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়া গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে খালগুলো রয়েছে সেগুলো আমরা এখনো বুঝে পাইনি। বিভিন্ন প্রকল্পের কারণে এই খালগুলো আমরা পাইনি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালগুলো পেলে সব খাল, জলাশয় নিয়ে আমরা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করব।’
সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ঢাকা একটা শহর যেথানে ১৪টি সংস্থা কাজ করে। প্রতিটি সংস্থা নিজকে স্বাধীন বলে দাবি করে কিন্তু তাদের কাজের কোনো জবাবদিহি নেই। আজ সিটি করপোরেশন রাস্তা করে দিলে কাল আবার ওয়াসা রাস্তা কেটে রাখে। এ অবস্থায় নান্দনিক নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করে কী লাভ হবে? দূষিত শহরের তালিকায় সবার নিচে। এ জন্য টেকসই উন্নয়নের বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
শ্যামল দত্ত বলেন, দখলদাররা রাজনৈতিকভাবে খুবই শক্তিশালী। এজন্য তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ভেঙে জলাশয় উদ্ধার করা হলেও সেখানে আবার ভরাট করা হয়েছে। হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হয়েছে ওইটার অবস্থা কী জানেন? ওইটার অর্ধেক নাই এখন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য। তাইলে ভবনটা ভাঙলেন কেন? পরিবেশবাদীরা যারা ওইটা নিয়ে আন্দোলন, বড় বড় মামলা করলেন তারা কই? সেই পরিবেশবাদীরা আবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কনসালটেন্ট!’
‘ঢাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে খাল পুনুরুদ্ধারের ভূমিকা’ শীর্ষক সংলাপে আয়োজনে ডুরাকে সহযোগিতা করে বিআইপি। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ডুরার সভাপতি ওবায়দুর মাসুম, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, ডুরার সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী ভাদুড়ী, ডিএসসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাবুল, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নার্গিস মাহতাব বক্তব্য সংলাপে বক্তব্য দেন।