ছাত্র-শিক্ষক আন্দোলনের প্রতি বিএনপির সমর্থন

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬ জুলাই ২০২৪, ১৪:০১
শেয়ার :
ছাত্র-শিক্ষক আন্দোলনের প্রতি বিএনপির সমর্থন

৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা বহাল রেখে প্রযুক্তি ও মেধানির্ভর বিশ্বব্যবস্থায় জাতি হিসেবে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে সরকারের আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নামে নতুন স্কিম চালু করা সরকারের দুর্বল আর্থিক খাত মেরামত করার একটা কৌশল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আজ শনিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ছাত্র এবং সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের প্রতি বিএনপির সমর্থন ব্যক্ত করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করা। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণ করা। সাংবিধানিকভাবে ও আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান। তবে সংবিধানে বলা আছে- নারী ও নাগরিকদের পিছিয়ে পড়া অংশ এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু সংরক্ষণ ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। কিন্তু ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা বহাল রেখে প্রযুক্তি ও মেধানির্ভর বিশ্ব-ব্যবস্থায় জাতি হিসাবে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। কোনো শ্রেণিতেই কোটা পদ্ধতি মেধা বিকাশে সহায়ক হতে পারে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েক দিন ধরে ছাত্ররা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলন করছে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবস সমূহ এমনকি তাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানের সহিত দাফন সম্পূর্ণ করা হয়। এগুলো তাদের প্রাপ্য। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ নানান সুবিধা আছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে প্রযুক্তি ও জ্ঞান ভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। তাই সাধারণ ছাত্র সমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবী সমূহের সাথে আমারা একমত।

তিনি আরও বলেন, ‘আইন ও বিচার বিভাগের দোহায় দিয়ে ছাত্র সমাজের যৌক্তিক দাবি দমানোর সকল অপচেষ্টাই ব্যর্থ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি । কারণ, ইতিহাসের শিক্ষা হচ্ছে জনগণের ন্যায়সংগত আন্দোলন, যা কখনোই দমানো যায় না । আমরা আশা করি সরকার সময় থাকতে ছাত্রসমাজের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি মেনে নেবে।’

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি দেশের সব কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও কর্মচারী সম্প্রতি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রকৃত পক্ষে এটি এই দেউলিয়া সরকারের দুর্নীতির আর একটি পথ খুলে দেওয়া।

মির্জা ফখরুল বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ৪টি প্রকল্পে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ কোটি জনগণের মধ্যে ৪০ হাজার আবেদন জমা পড়ছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে (বিবিসি) প্রকাশিত হয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল সংসদে এই বিল উত্থাপনের ভাষণে বলেছিলেন সর্বজনীন পেনশন স্কিমের টাকা রাখবার জন্য সরকার জায়গা খুঁজে পাবে না। সরকারের আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নামে নতুন স্কিম চালু করা সরকারের দুর্বল আর্থিক খাত মেরামত করার একটা কৌশল।