হৃদয়ে বাজে প্লেব্যাক সম্রাটের গান
এন্ড্রু কিশোরের আজ চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী
প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের আজ চলে যাওয়ার দিন। ২০২০ সালের আজকের দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। চার দশকের বেশি সময় ধরে সংগীতাঙ্গনে রাজত্ব করেছেন এন্ড্রু কিশোর। আধুনিক ও চলচ্চিত্রের অনেক কালজয়ী গান তার কণ্ঠে সমৃদ্ধ হয়েছে। হৃদয়ে বেজে ওঠে প্লেব্যাক সম্রাটের গান। সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, প্রেম-বিরহÑ সব অনুভূতির গানই তিনি গেয়েছেন।
১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। তার পিতা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতা মিনু বাড়ৈ। এন্ড্রু কিশোরের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে রাজশাহীতে। তার মাতা ছিলেন সংগীত অনুরাগী। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই তিনি সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন। এন্ড্রু কিশোর আবদুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীত শিক্ষা নেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর তিনি নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গানে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কিশোর বয়স থেকেই জন্মস্থান রাজশাহীতে তিনি ছিলেন সবার মধ্যমণি। যখন গাইতেন তখন রাজশাহীর রানীবাজার, ভুবনমোহন পার্ক স্থবির হয়ে যেত তার কণ্ঠের মায়ায়। এন্ড্রু কিশোরকে একনামে চিনত রাজশাহীর মানুষ। রাজশাহী শহরে তখন খুব ধুমধাম করে দুর্গাপূজা হতো। পূজার সময় মিউজিক কনসার্ট হতো। রানীবাজারের অ্যারোহেড ক্লাব খুব জাঁকজমকের সঙ্গে দুর্গাপূজা করত। তাদের সেই পূজা মিউজিক কনসার্টে এন্ড্রু কিশোর গান গাইতেন। রাস্তার ধারে উঁচু মঞ্চে এন্ড্রু কিশোর গান গাইছেন, আর হাজার হাজার মানুষ তার গান শুনছেন। তার গানের সময় রাস্তা বন্ধ হয়ে যেত।
১৯৭৭ সালে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু করেন। আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ ছবির ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মাধ্যমে প্রথম কোনো চলচ্চিত্রের জন্য কণ্ঠ দেন তিনি। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানের মাধ্যমে দর্শকরা প্রথম তার কণ্ঠ শোনেন এবং গানটি জনপ্রিয়তা পায়।
দেশের প্রখ্যাত সুরকারদের মধ্যে বেশি গান করেছেন আলম খান, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, আলাউদ্দিন আলীর সঙ্গে। এ ছাড়া গান করেছেন শেখ সাদী খান, ইমন সাহা, আলী আকরাম শুভসহ অনেকের সঙ্গে। ভারতের প্রখ্যাত সুরকার আর ডি বর্মণের সুরেও গান গেয়েছেন তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে কলকাতাতেও প্লেব্যাকে বেশ কয়েকটি গান করেছেন তিনি।
দীর্ঘ সংগীত জীবনে কণ্ঠ দিয়েছেন ১৫ হাজারেরও বেশি চলচ্চিত্রের গানে। চলচ্চিত্রে গান গেয়ে প্লেব্যাক সম্রাটের উপাধি পেয়েছেন। এর মধ্যে কালজয়ী গানের সংখ্যাও অনেক। ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু ভালোবাসা পেলাম না’, ‘শোন গো চাঁদ শোন তারা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’সহ আরও অসংখ্য গান শ্রোতামনে গেঁথে আছে।
চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের জন্য আটবার শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। বড় ভালো লোক ছিল (১৯৮২), সারেন্ডার (১৯৮৭), ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯), পদ্মা মেঘনা যমুনা (১৯৯১), কবুল (১৯৯৬), আজ গায়ে হলুদ (২০০০), সাজঘর (২০০৭) ও কি যাদু করিলা (২০০৮)। এ ছাড়াও পাঁচবার বাচসাস পুরস্কারসহ পেয়েছেন আরও অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। তারা দুজনই থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। মেয়ে মিনিম এন্ড্রু সংজ্ঞা ও ছেলে জে এন্ড্রু সপ্তক।
নন-হজকিন লিম্ফোমা নামক ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৯ মাস চিকিৎসা নেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন। চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি নিজের ইচ্ছায় দেশে ফিরতে চান। তিনি বলেছিলেন, আমি আমার দেশে গিয়ে মরতে চাই, এখানে নয়। মারা যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন তার শৈশব-কৈশোরের প্রিয় জন্মভূমি রাজশাহীতেই। ৬৪ বছর বয়সেই থেমে যায় প্লেব্যাক সম্রাটের প্রাণ।
জনপ্রিয় কিছু গান-
জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প
হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস
ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি
আমার বুকের মধ্যিখানে
তুমি যেখানে আমি সেখানে
আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন
ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা
সবাই তো ভালোবাসা চায়
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা
বেদের মেয়ে জোসনা আমায়
ভালো আছি ভালো থেকো
তুমি মোর জীবনের ভাবনা
তোমায় দেখলে মনে হয়
চাঁদের সাথে আমি দেব না