দিনাজপুরে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৬ জনের পরিচয় মিলেছে
দিনাজপুর সদর উপজেলায় নাবিল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ও আমবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ছয়জনের পরিচয় মিলেছে। আজ শুক্রবার সকাল ৬টায় দিনাজপুর সদর উপজেলার ৫ নম্বর শশরা ইউনিয়নের পাঁচবাড়ী বাজার সংলগ্ন বলরামপুর( দইসই) এলাকায় আরিয়ান পেট্রোল পাম্পের পশ্চিমে দিনাজপুর ফুলবাড়ি মহাসড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে ।
নিহতরা হলেন চিরিরবন্দর কোচনা এলাকার মো, মমিনুরের ৫ মাস বয়সী মেয়ে জায়না, ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ বদতালীগাঁও এলাকার দানেশ আলীর ছেলে মো. আলী (৫২), বাসটির সুপারভাইজার বোচাগঞ্জ মিলরোড এলাকার মৃত লক্ষন বাহাদুরের ছেলে রাজেশ বাহাদুর (৩৫), ট্রাকচালক ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ মিত্রপাঠ এলাকার মৃত সুরার ছেলে হাসু (২৮), বোচাগঞ্জ আনোয়ারা এলাকার জাহিদ ও সুলতানা পারভীনের মেয়ে বিভা(১০), চিরিরবন্দর আমবাড়ি বিশ্বনাথপুর এলাকার বিমল চন্দ্র রায়ের ছেলে ভ্যানচালক সদেশ রায়( ৩০)।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, দিনাজপুর সদর উপজেলার পাঁচবাড়ী চকরামপুর আরিয়ান পেট্রোল পাম্পের পশ্চিমে ঢাকাগামী আম বোঝাই একটি ট্রাক(ঢাকা মেট্রো-ট ১৭-০০৮৩) তার রাস্তার সাইড পরিবর্তন করে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও রানীশংকৈলগামী যাত্রীবাহী বাস নাবিল পরিবহনকে (ঢাকা মেট্রো ট-১৪-৪১৯০) সামনাসামনি ধাক্কা দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।এবং ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চালক ও বাসের হেলপার মারা যান। আহতদের উদ্ধার করে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজন শিশু, বাসের সুপারভইজার ও যাত্রীসহ মোট ছয়জন মারা যান। এ ঘটনায় আহত হয়ে ২৮জন চিকিৎসাধীন আছেন।
বাসের এক যাত্রী বলেন, নাবিল গাড়িটি ৮০ থেকে ৮৫ কিলোমিটার বেগে চলছিল। এর মধ্যে আবার চলন্ত অবস্থায় বাসের ড্রাইভারের সঙ্গে এক যাত্রীর ঝগড়া চলছিল। আর এরই মধ্যে একটি ট্রাক তার সাইড পরিবর্তন করে আমাদের গাড়ির হঠাৎ সামনাসামনি চলে আসলে ড্রাইভার অনেক চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এই দুর্ঘটনা ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘ছোট বাচ্চাসহ বাসে অনেক যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে এবং ঘটনাস্থলেই বাসের হেলপার এবং ট্রাকের চালক মারা গেছে আমি মাথায় আঘাত পেয়েছি এবং জানালা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পায়ে আঘাত পাই। কারণ বাসের সামনেটা দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ায় বের হওয়া যাচ্ছিল না। পরে স্থানীয় লোকজন মই এনে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে বাসে আটকে পরা যাত্রীদের উদ্ধার করে।’
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো, ফরিদ হোসেন বলেন, রেকারের মাধ্যমে রাস্তা থেকে বাসটি পুলিশ লাইনসে নেওয়া হয়েছে এবং ট্রাকটি আরিয়ান পেট্রোল পাম্পের পাশে রাখা রয়েছে। বর্তমানে রাস্তার যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এ দুর্ঘটার পরপরই আহতদের দেখতে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান দিনাজপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাকিল আহমেদ ও পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ্ ইফতেখার আহমদ। তারা আহততের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য পরিবারদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন ।
এ সময় জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ নিহত ও আহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের সার্বিক সহোযোগিতা করা হচ্ছে এবং হবে। এর পাশাপাশি দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমদ বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে আমরা যেটা জানতে পেরেছি ট্রাকের হেলপার ট্রাক চালাচ্ছিল এবং ড্রাইভার পাশে বসে ছিল। এর পাশাপাশি বাস চলন্ত অবস্থায় বাসচালকের সঙ্গে বাসের এক যাত্রীর কথা কাটাকাটি চলছিল। এর ফলে চালক কিছুটা অমনোযোগী ছিল। প্রথমে ট্রাকটি একটি ভ্যানচালককে ধাক্কা দিয়ে রোড লেন ক্রস করে নাবিল বাসের সামনে চলে আসে। ফলে বাস নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’
তিনি বলেন, তদন্ত অব্যাহত আছে এবং ট্রাকের হেলপার চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশি হেফাজত রয়েছে। সড়ক আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
