অবৈধ সেই সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতাল বন্ধ করল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
স্থাস্থ্য অধিপপ্তরের লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্রবিহীন, ডাক্তার-নার্স এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়া অবৈধভাবে চলে আসা চট্টগ্রাম নগরীর প্রবর্তক মোড়ের সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতাল বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান অবৈধ হাসপাতালটি বন্ধের নির্দেশ দেন। সেই নিদের্শনার আলোকে গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধের আদেশ জারি করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই হাসপাতালটি চলে আসছিল। এ ছাড়া নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার-নার্স। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে হাসপাতালটি বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। সেই আলোকে আমরা গতকাল হাসপাতালের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা জারি করি। হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকলে সোমবারের মধ্যে যথোপযুক্ত হাসপাতালে রেফার নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এর আগে গত ৪ মার্চ হাসপাতালটিতে অভিযান পরিচালনা করেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। লাইসেন্সসহ যাবতীয় অনুমতিপত্র, প্রয়াজনীয় সংখ্যক ডাক্তার, নার্স না থাকা এব প্রতিষ্ঠানটির ল্যাবেও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার প্রমাণ পান। এ ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী যে সংখ্যক ডাক্তার থাকার কথা সে সংখ্যক ডাক্তারের উপস্থিতি না থাকায় হাসপাতালটি তখন সাময়িক বন্ধ করেছিল সিভিল সার্জন।
গত ১০ মার্চ হাসপাতালের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অনিয়ম সংশোধনের জন্য ৩ মাস এবং ৪ মার্চ আরেকটি আবেদনে ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অনিয়ম সংশোধনের জন্য ১ মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম। ১২ মার্চ চার শর্তে হাসপাতাল ও প্যাথলজি কার্যক্রম পুনরায় চালুর অনুমতি দেন সিভিল সার্জন।
হাসপাতাল ও লাইসেন্সের নবায়ন হালনাগাদ, লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র, নারকটিকস, টিআইএন সার্টিফিকেট, ভ্যাট সার্টিফিকেট, টাকা জমা দেওয়ার চালান, ফায়ার লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স ও বাড়ি ভাড়ার হালনাগাদ চুক্তিপত্র জমা, শয্যানুযায়ী চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীদের নিয়োগপত্র, যোগদানপত্রসহ শিক্ষাগত সনদপত্র দাখিল এবং ল্যাব টেকনোলজিস্টের নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র এবং শিক্ষাগত সনদপত্র দাখিলের শর্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুই মাসের এসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি।
ক্রুটি-বিচ্যুতি ও অনিয়ম নিরসন না হলে বিধি মোতাবেক জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়ে জানাতে গত ৯ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেন। গত ৩ জুন সিভিল সার্জন চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন শর্তই পূরণ করতে পারেনি। এরপরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালটি বন্ধের আদেশ জারি করে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করেন ডা. রেজাউল। সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি ছাড়া হাসপাতাল চালানোর অভিযোগে ২০১৮ সালে সেটি সরানোর নির্দেশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের তৎকালীন পরিচালক মো. আজাদুর রহমান মল্লিক।
অন্যদিকে, অনুমোদনহীন হাসপাতাল পরিচালনা করায় চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনারকে হাসপাতাল কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান। বিষয়টি অনুসন্ধান করে আইনি ব্যবস্থা নিতে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছিলেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম।
এদিকে, বেসরকারি হাসপাতালের জন্য চারতলা ভবন ভাড়া নিয়ে নকশা পরিবর্তন করেছেন ডা. রেজাউল। সেই নকশা এবং ভুয়া চুক্তিপত্র বানিয়ে পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্সের আবেদন করেছেন। সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি ছাড়া এবং প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করায় সেটি সরানোর নির্দেশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। নকশা পরিবর্তন করায় বর্ধিত অংশ উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এরপরও নানা ছলচাতুরির আশ্রয়ে দীর্ঘ সাত বছরের বেশি সময় ধরে চলছিল হাসপাতালের কার্যক্রম।
জানা গেছে, সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতালটি মূলত চারতলা আবাসিক ভবনের নকশার অনুমোদন দিয়েছিল সিডিএ। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভবন মালিকের চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে চারতলার ছাদের ওপরে আরও একতলা ভবন নির্মাণ করেছেন মালিককে না জানিয়েছে। বিষয়টি সিডিএকে অবহিত করেন ভবনের মালিক সৈয়দ মিয়া।
ভবন মালিক বলেন, ‘২০১৫ সালে চারতলা ভবনটি ১০ লাখ টাকা জামানত ও মাসে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ভাড়ার চুক্তি হয় ডা. রেজাউল ইসলামের সঙ্গে। চুক্তির কয়েক মাস পর থেকে ভাড়া দিচ্ছিল না। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক বছর আগে। এরপরও আমার ভবন জবরদখলে রেখেছে।’