রাজশাহীতে এমপি শাহরিয়ারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, কুশপুত্তলিকা দাহ

রাজশাহী ব্যুরো
২৮ জুন ২০২৪, ২১:৪৩
শেয়ার :
রাজশাহীতে এমপি শাহরিয়ারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, কুশপুত্তলিকা দাহ

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের এমপি ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমকে জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী নগরীতে মহানগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে রাজশাহীতে শাহরিয়ারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।

রাজশাহীর বাঘায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল নিহতের ঘটনায় শাহরিয়ার আলমের ‘বিস্ফোরক’ মন্তেব্যের পর থেকেই ফুঁসে উঠতে থাকে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। গত বৃহস্পতিবার আশরাফুল ইসলাম বাবুলের জানাজায় শাহরিয়ার আলম হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও দলীয় আরেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেন।

এমপি শাহরিয়ারের এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আজ বিকালে রাজশাহী নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মহানগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। বিক্ষোভ মিছিল থেকে এমপি শাহরিয়ারের কুশপুত্তলিকায় জুতার মালা পরিয়ে তাতে জুতাপেটা করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এমপি শাহরিয়ারকে রাজশাহীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

নগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলোত্তর সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মণির, সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দ দত্ত বাপ্পি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আব্দুল মোমিন, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিয়াম ও সাধারণ সম্পাদক ডা. সিরাজুম মুনির সবুজ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দলিল লেখক সমিতির অবৈধ টাকা ভাগাভাগি নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে নৃশংস হামলায় বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল খুন হন। এ হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা হিসেবে এমপি শাহরিয়ার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নাম জড়িয়ে তিনি চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই এমপি শাহরিয়ার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা খায়রুজ্জামান লিটনকে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।

শাহরিয়ারকে হাইব্রিড আখ্যা দিয়ে তারা বলেন, তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসা এমপি হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ফাটল ধরানোর মিশনে নেমেছেন। কিন্তু শাহরিয়ারের এই চক্রান্ত কখনো সফল হবে না।

এ বিষয়ে শাহরিয়ার আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার ব্যক্তিগত সহকারী সিরাজুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি এমপির কাছকাছি নেই বলে জানান।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহত আওয়ামী লীগ বাবুলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই জানাজায় স্থানীয় এমপি শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা জবাব চাই, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে। অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলুর কাছে জবাব চাই, সে কেন আজ পলাতক? খুনের মামলায় দুজন সশরীরে উপস্থিত ছিল। পেছন থেকে মদদদাতা হিসেবে আসাদুজ্জামান আসাদ, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং লায়েব উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। তাদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।’

এমপি শাহরিয়ারের এমন বক্তব্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আর রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ সাফ ঘোষণা দিয়েছেন, অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হলে শাহরিয়ারকে পাল্টা মামলার মুখোমুখি হতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ২২ জুন বাঘা উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন বাবুল। গত বুধবার (২৬ জুন) বিকালে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান।