এসডিজি সম্পর্কিত প্রথম জাতীয় কমিউনিকেশনস স্ট্র্যাটেজি চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন

অনলাইন ডেস্ক
২৭ জুন ২০২৪, ১৯:৫৪
শেয়ার :
এসডিজি সম্পর্কিত প্রথম জাতীয় কমিউনিকেশনস স্ট্র্যাটেজি চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক ইউনিট ও ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেস (ইউএনওপিএস) যৌথভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সম্পর্কিত প্রথম জাতীয় কমিউনিকেশনস স্ট্র্যাটেজি এবং অ্যাকশন প্ল্যান ২০২৪-২০৩০ -এর চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করা হয়েছে। এই স্ট্র্যাটেজি এবং অ্যাকশন প্ল্যান উপস্থাপনের মাধ্যমে সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে, ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসডিজি সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক লক্ষ্যগুলি স্থানীয়করণে যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছিলেন তা অর্জনের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ইউনাইটেড ইন প্রোগ্রেস: শেয়ারিং দ্য ন্যাশনাল এসডিজিস কমিউনিকেশনস স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান’ শিরোনামে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

বিশেষ অতিথিদের মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী মো. আখতার হোসেন; বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহমেদ এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিসেস গুইন লুইস।

এসডিজি স্থানীয়করণে দেশব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অগ্রগতিতে সহায়তা করার জন্য দিক নির্দেশনা প্রদান করবে এই স্ট্র্যাটেজি এবং অ্যাকশন প্ল্যান।

প্রচারণা, অন্তর্ভুক্তি, শিখন এবং নাগরিকদের ক্ষমতায়ন- এই চারটি মূল উদ্দেশ্যেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় কমিউনিকেশনস স্ট্র্যাটেজি এবং অ্যাকশন প্ল্যান ২০২৪-২০৩০ এ।

দেশের ছয়টি বিভাগ এবং নয়টি জেলার এসডিজি সমন্বয় কমিটি, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভার কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের পাশাপাশি শিক্ষাবিদ, ছাত্র, যুব, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, উন্নয়ন পেশাজীবী, উদ্যোক্তা, ডাক্তার, পুষ্টিবিদ, নৃতত্ত্ববিদ, ধর্মীয় নেতা, সাংস্কৃতিক শিল্পী, স্থানীয় নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, জলবায়ু কর্মী, নারী অধিকার কর্মী, এনজিও এবং আইএনজিও প্রতিনিধি, জাতিসংঘ সংস্থা, ক্রীড়াবিদ, ব্যাংকিং পেশাদার, ব্যবসায়ী, প্রকৌশলী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ মাঠ পর্যায়ে দুই হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীকে সম্পৃক্ত করে আলোচনা, মতবিনিময় এবং পরামর্শের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে এই স্ট্র্যাটেজি এবং অ্যাকশন প্ল্যান। পরবর্তী পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের ফিডব্যাকের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয় এর খসড়া।

এসডিজি নিয়ে দেশব্যাপী সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি ‘ফোর সি (4C) অ্যাকশন মডেল’ (সহযোগিতা-Collaboration, যোগাযোগ Communication, প্রচারাভিযান Campaigns এবং সমন্বয় Coordination) প্রস্তাব করা হয়েছে এই স্ট্র্যাটেজিতে। ‘Start Doing Good/ চলো ভাল কিছু করি’ নামক 360 Degree Edutainment Campaigns কিংবা আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষামূলক প্রচারাভিযানের মাধ্যমে জাতীয় থেকে স্থানীয় পর্যায়ে এসডিজি নিয়ে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ইউএনওপিএস (UNOPS) এর কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরলীধরনের সূচনা বক্তব্যের পর, স্ট্র্যাটেজি এবং অ্যাকশন প্ল্যান এর চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুল ইসলাম এবং ইউএনওপিএস-এর এসডিজিস কমিউনিকেশনস সিনিয়র অফিসার নুসরাত আমীন। পরবর্তীতে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে আমন্ত্রিত অংশগ্রহণকারীরা স্ট্র্যাটেজি এবং অ্যাকশন প্ল্যান চূড়ান্ত করতে সহায়তা করার জন্য তাদের সুপারিশ প্রদান করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ সহ জাতীয় পরিকল্পনা কাঠামোতে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা একীভূত করেছি। এই একীকরণ শুধুমাত্র নীতিগত সিদ্ধান্ত নয়; এটি টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রতি আমাদের দেশের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। সরকারি বেসরকারি সব অংশীজনসহ আমি সব মিডিয়া এবং সাংবাদিকদের এই মহৎ প্রচেষ্টায় আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এসডিজি সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং সচেতন নাগরিক সম্পৃক্ততার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে আপনাদের সবার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন আমরা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্পকে বাস্তবে রূপান্তর করতে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করি।’

এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী আখতার হোসেন স্ট্র্যাটেজির গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা এই স্ট্র্যাটেজি এবং অ্যাকশন প্ল্যানটিকে কার্যকরী করতে চাই এবং সেখানে সরকারের পাশাপাশি, বেসরকারি খাত, উন্নয়ন অংশীজন, একাডেমিয়া, এনজিও, মিডিয়া এবং সুশীল সমাজের সমর্থন খুবই গুরুত্রপূর্ণ। একটি কার্যকরী জাতীয় এসডিজি যোগাযোগ কৌশল তৈরিতে সরকারকে কারিগরী সহায়তা প্রদানের জন্য আমি ইউএনওপিএস (UNOPS)-কে ধন্যবাদ জানাই।’

বাংলাদেশকে এই সময়োপযোগী যাত্রায় সহায়তা করার জন্য জাতিসংঘের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিস গুইন লুইস বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার, সুশীল সমাজ এবং সকল অংশীজনদের সাথে জাতিসংঘ সবসময় সহযোগিতা করে আসছে। কাউকে পেছনে না ফেলে সম্মিলিতভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে এই জাতীয় কমিউনিকেশনস স্ট্র্যাটেজি এবং অ্যাকশন প্ল্যান এর ভূমিকা নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। এর সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত আছি।’

ডক্টর মো. কাউসার আহমেদ তার সমাপনী বক্তব্যে সকলের মতামত প্রতিধ্বনিত করে বলেন, ‘আমরা আশা করছি যে, কার্যকর যোগাযোগ ও প্রচারণাভিযানের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করে এই স্ট্র্যাটেজি এবং অ্যাকশন প্ল্যান টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশের নাগরিক, অংশীদারদের সাথে নিয়ে অন্তর্ভুক্তি, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এই উদ্যোগের সাথে আছে।’

স্মার্ট বাংলাদেশ এবং ভিশন ২০৪১ -এর লক্ষ্যগুলির সাথে জাতীয় এসডিজিস কমিউনিকেশনস স্ট্র্যাটেজি এবং অ্যাকশন প্ল্যান সরাসরি সম্পর্কিত। এটি চূড়ান্তকরণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসডিজি বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক লক্ষ্যগুলি স্থানীয়করণে দেশের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা সম্ভব হবে বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিতি সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।