গ্যাস বাবুর মোবাইল ফোন উদ্ধারে ঢাকা থেকে ঝিনাইদহে যাচ্ছে ডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫ জুন ২০২৪, ১৯:১৩
শেয়ার :
গ্যাস বাবুর মোবাইল ফোন উদ্ধারে ঢাকা থেকে ঝিনাইদহে যাচ্ছে ডিবি

ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু তার তিনটি মোবাইল ফোন পুকুরে ফেলে দেন। সেই মোবাইল ফোনগুলো উদ্ধারে ঝিনাইদহে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) তদন্ত দল। অভিযানে ডিবির সঙ্গে একজন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। বাবুকেও ঘটনাস্থলে নেবে ডিবি।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

হারুন অর রশীদ বলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে মোবাইলগুলো কোথায় কোথায় ফেলেছেন সেগুলো তিনি বলেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আদালতের কাছে আবেদন করা হয় বাবুকে সঙ্গে নিয়ে আলামত উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।

তিনি বলেন, ‘গ্যাস বাবু আদালতে বলেছেন, সে একজন নেতার নির্দেশে আশেপাশের কোনো এক নালা বা পুকুরে ফেলে দিয়েছেন মোবাইল। কোন নালা বা পুকুরে ফেলেছেন তিনি আদালতে জানিয়েছেন। গ্যাস বাবুকে সঙ্গে নিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নিয়ে আলামত উদ্ধারে জোর চেষ্টা চালানো হবে। পানির মধ্যে থেকে আলামত উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ও জেলেদেরকে কাজে লাগানো হবে।

আলামতগুলো কেউ যেন সরিয়ে ফেলতে না পারে সেজন্য আপনারা কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। অবশ্যই সেটা নজরদারিতে থাকবে।

তিনি বলেন, গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি তখন বলেছিলেন, মোবাইলগুলো হারিয়ে গেছে, তিনি জিডি করেছেন। কিন্তু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, একজন নেতার নির্দেশে পুকুরে ফেলে দিয়েছেন। এই মোবাইলগুলো দিয়েই আনার হত্যার মূলঘাতক আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া গ্যাস বাবুর সঙ্গে অসংখ্যবার কথা বলেছেন। এ ছাড়া অসংখ্য মেসেজ তারা তথ্য আদান-প্রদান করেছেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘মোবাইলগুলোতে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত আছে বলে মনে করছি। না হলে গ্যাস বাবুর মোবাইলগুলো পানিতে ফেলে দেবেন কেন? মোবাইলগুলো পেলে মামলার তদন্তে অনেক সহায়তা হবে। সেজন্য মোবাইল উদ্ধার করা অনেক জরুরি।’

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ফাইল ছবি

এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন কবে নাগাদ কলকাতায় যাবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কলকাতা পুলিশের সঙ্গে এমপি আনারের পরিবারের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। ডরিন কিছুটা অসুস্থ, এজন্য হয়তো দেরি হচ্ছে। তারা শিগগির কলকাতায় যাবেন ডিএনএ স্যাম্পল দেওয়ার জন্য।

উল্লেখ্য, এর আগে গতকাল সোমবার গ্যাস বাবুকে নিয়ে মোবাইল ফোন উদ্ধারের অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহের আদালত বাবুর জামিন আবেদন ও রিমান্ড নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। অভিযানের সময় একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে উপস্থিত রাখার নির্দেশনা দেন আদালত।

এর আগে গত ৯ জুন আদালত আসামি বাবুর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে গত ১৪ জুন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ওইদিন জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। একই মামলায় শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভুঁইয়া এবং শিলাস্তি রহমানও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকেও রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।