বিশ্বতারকার বিষাদে আজও বিশ্বকাঁদে
মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুবার্ষিকী
তাকে বলা হয় তারকাদের তারকা। খুব বেশি দিনের জীবন নয়, অথচ রেখে গেছেন অবিশ্বাস্য সাফল্যের গল্পকথা। গানের তালে তালে তার নাচের কৌশলগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল বিক্রীত অ্যালবামের সংগীতশিল্পীদের অন্যতম তিনি। হ্যাঁ, মাইকেল জ্যাকসনের কথাই বলা হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত প্রপোফল সেবনে ২০০৯ সালের আজকের দিনে মারা যান তুমুল জনপ্রিয় মার্কিন এ পপ গায়ক, গীতিকার, নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা ও ব্যবসায়ী। তার বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। মৃত্যুর ১৫ বছর পার হতে চললেও এখনো তাকে নিয়ে অগণিত মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। বিশ^তারকার বিষাদে আজও বিশ^ কাঁদে। ভক্তদের মনের মণিকোঠায় তিনি আছেন আগের মতোই। বৈচিত্র্যময় জীবনই পপ গায়ককে এনে দিয়েছে অমরত্ব।
জীবন মাইকেল জ্যাকসনকে হাত ভরে দিয়েছিল ঐশ্বর্য। পেয়েছিলেন ১৩টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। তার লাখো ক্যাসেট আর সিডি বিক্রি হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনিই বদলে দিয়েছিলেন সংগীতবিশ্বকে। তার কনসার্টগুলোও ছিল দেখার মতো। একদিকে জ্যাকসন গাইছেন, অন্যদিকে দর্শক-শ্রোতার দল পাগল হয়ে যাচ্ছে। কেউ উন্মাদের মতো আচরণ করছে, কেউ আবার উত্তেজনায় হয়ে যাচ্ছে অজ্ঞান! সত্যিই, এটা কেবল মাইকেল জ্যাকসন বলেই সম্ভব হয়েছে। দুর্দান্ত নাচের জন্য আলাদা খ্যাতি ছিল তার। কিন্তু একবার এই নাচের অনুশীলন করতে গিয়েই নাক ভেঙে ফেলেছিলেন। সেটা ১৯৭৯ সালের ঘটনা। ‘অব দ্য ওয়াল’ অ্যালবাম মুক্তির পরের ঘটনা সেটি। দুর্ঘটনাটির পর নাকের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, অস্ত্রোপচার করতে হয় তাকে।
জ্যাকসনই ইতিহাসের একমাত্র গায়ক, যুক্তরাষ্ট্রে যার একই অ্যালবামের পাঁচটি গান টপ চার্টের শীর্ষে। পরে তার এই রেকর্ডে ভাগ বসান কেটি পেরি। জ্যাকসন নিয়ে কিছু লিখলে ‘থ্রিলার’ অ্যালবামের প্রসঙ্গ আসবেই। সর্বকালের সেরা বিক্রি হওয়া অ্যালবামগুলোর একটি এটি। বিশ্বজুড়ে ১০০ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয় অ্যালবামটি। সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে তার অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে ৭৫০ মিলিয়নের বেশি। গানের সঙ্গে কারাতেতেও পারঙ্গম ছিলেন তিনি। ছিলেন ব্ল্যাক বেল্ট, যা তিনি অর্জন করেছিলেন জাপানে, ১৯৯০ সালে। গান ছাড়া বিভিন্ন দাতব্য কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। এজন্য ১৯৯৮ ও ২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
অজানা কিছু ঘটনা
জীবদ্দশায় অনেক ঘটনারই জন্ম দিয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। উল্লেখ করার মতো অজানা কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো এখানে
দুরন্তপনা
১০ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম। শৈশবে ভাইবোনদের সঙ্গে দুরন্তপনা করেই কেটেছে জ্যাকসনের সময়। বোন লা টয়াকে জ্বালাতন করতে প্রায়ই বিছানায় মাকড়সা ছেড়ে দিতেন তিনি।
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
কৌতুকপ্রিয়
জ্যাকসন কৌতুক খুবই পছন্দ করতেন। জনপ্রিয় কমেডি সিরিজ ‘দ্য থ্রি স্টুজেস’-এর বিশাল ভক্ত ছিলেন তিনি।
কাতুকুতুতে কাবু
কাতুকুতুর মাত্রাটা একটু বেশিই ছিল তার। খুব সহজেই কাতুকুতু দিয়ে জ্যাকসনকে কাবু করে ফেলা যেত।
বইপড়ুয়া
বই পড়ার অভ্যাস ছিল জ্যাকসনের। শৈশবে তার পছন্দের দুটি বই ছিল ‘দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ এবং ‘রিপ ভ্যান উইংকেল’।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা
শখ ছিল সাপের প্রতি
সাপের প্রতি শখ ছিল জ্যাকসনের। উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিশালাকৃতির ও ভয়ঙ্করপ্রকৃতির সাপ বোয়া কন্সট্রিক্টর ছিল তার কাছে। এটির নাম রেখেছিলেন মাসলস। এ ছাড়া ক্রাশার নামে একটি অজগরও ছিল তার।
বিরল রোগ
১৯৯৩ সালে জ্যাকসনের বিরল চর্মরোগ ভিটিলিগোর কথা জানান তার ত্বক বিশেষজ্ঞ। মাত্র ১-২ শতাংশ মানুষ এ রোগে ভোগে। এ রোগের কারণে ত্বকের কোষের স্বাভাবিক রঞ্জনপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
অনীহা
মার্কিন পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসনের ডাকনাম ছিল ওয়াকো জ্যাকো। কিন্তু এই নামটি খুবই অপছন্দ করতেন তিনি।
গ্র্যামি রেকর্ড
১৯৮৪ সালে আটটি গ্র্যামি পুরস্কার অর্জন করে রেকর্ড গড়েছিলেন ‘পপ কিং’। এক আসরে এতগুলো গ্র্যামি পুরস্কার ঝুলিতে ভরার রেকর্ড ভাঙতে পারেননি আর কোনো সংগীতশিল্পী। জীবদ্দশায় মোট ১৩টি গ্র্যামি পুরস্কার পেয়েছিলেন জ্যাকসন।