রাসেলস ভাইপার নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড, পুরস্কার ঘোষণা প্রত্যাহার
জীবিত হোক বা মৃত, কোনো প্রকার রাসেলস ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। আজ দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহার করা হয়।
এর আগে রাসেলস ভাইপার মারতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। পরে রাসেলস ভাইপার জীবিত ধরতে পারলে ওই পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান। এমন ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার তৈরি হলে আজ ওই ঘোষণা প্রত্যাহর করা হয়।
এদিকে পুরস্কারের ঘোষণা গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তা ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুরস্কার পেতে বিভিন্ন জায়গায় সাপ মারার উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে। ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের দুর্গম চরের ৩৮ দাগ এলাকায় শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জমিতে ঘাস কাটার সময় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে সেটি মেরে ফেলেন ওই গ্রামের মুরাদ মোল্লা (৪৩) নামে একজন কৃষক। এরপর তিনি পদ্মা পাড়ি দিয়ে সিঅ্যান্ডবি ঘাটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু ফকিরের অফিসে সাপটি নিয়ে আসেন।
আবু ফকির সাংবাদিকদের জানান, মুরাদ মোল্লাকে সভাপতি ঘোষিত পুরস্কার দেওয়া হবে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের এই পুরস্কারের ঘোষণার পরে বনবিভাগের পক্ষ থেকে এটি আইনসিদ্ধ নয় বলে সমালোচনা করা হয়। এরপর অবশ্য রাসেলস ভাইপার মেরে ফেললে পুরস্কার দেওয়ার পূর্ব ঘোষণা থেকে সরে এসে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়- মেরে ফেললে নয়, জীবিত অবস্থায় রাসেলস ভাইপার ধরতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলী আশরাফ পিয়ার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন কেউ যদি নিজেকে রক্ষাকারী পোশাক সম্বলিত হয়ে এবং সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বনপূর্বক জনস্বার্থে রাসেলস ভাইপার জীবিত অবস্থায় ধরতে পারেন, তবে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কৃত করা হবে। এরপর আবার জীবিত সাপ ধরার উৎসাহ সৃষ্টি হয়।
পরেরদিন শনিবার সকালে পদ্মার চর থেকে একটি জীবিত রাসেলস ভাইপার সাপ ধরেন রেজাউল নামে এক যুবক। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় পাতিলের মধ্যে একটি জীবিত সাপ নিয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে হাজির হন সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের কাদেরের বাজার এলাকার রেজাউল।
রেজাউল বলেন, ‘সকালে চরের মধ্যে থেকে ধরছি। সাপটা হাইট্যা যাইতেছিল। গায়ের গেঞ্জি ছুড়ে ওকে ধরছি। নেতারা পুরস্কার ঘোষণা করছেন। এজন্য রিস্ক নিয়ে ধরছি। এখন বনবিভাগে জমা দিতে আইছি।’
তবে রবিবার দুপুরে ফরিদপুরের বনবিভাগের অফিসে সাপটি নিয়ে গেলে তাকে সাপসহ ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ধরনের পুরস্কার ঘোষণা করাটাইতো অবৈধ। মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। আমরা এটা প্রমাণ করতে যাব কেন? ওই কৃষকের উচিত হবে যেখান থেকে সাপটি ধরেছে, ওই স্থানে ছেড়ে দেওয়া।’
এদিকে, রবিবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়ে সবাইকে রাসেলস ভাইপার সাপ মারা বা ধরার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানান।
শামীম হক তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘জীবিত বা মৃত কোনো প্রকার রাসেলস ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে রাসেলস ভাইপার একটি আলোচিত বিষয়, পাশাপাশি জনগণের জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি অত্যন্ত বিপদজনক বিধায় যেকোনো পুরস্কার বা কৌতূহলবশত এ সাপ নিয়ে অতি উৎসাহী হবেন না। জীবিত বা মৃত কোনো প্রকার রাসেলস ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই।’
তিনি লিখেন, ‘সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন অথবা নিকটস্থ বনবিভাগের অফিসকে অবহিত করুন।’
