হাটের ডাক নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫৫
নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাটের ‘খাস কালেকশন’ নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৫৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩ জনকে গুরুতর অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ৩৩ জনকে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা স্থানীয় ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
আজ শনিবার দুপুরে সদর ইউনিয়নের ভূমি অফিসের সামনে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহতরা হলেন- ফজলে রাব্বি (৩০), মজিবুর রহমান (৫২) ও মামুনুর রশিদ (২৮)।
প্রত্যক্ষদর্শী, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুছ বাবুল ও পরাজিত প্রার্থী মুস্তাফিজুর রহমান চয়নের মধ্যে রাজনৈতিক গ্রুপিং শুরু হয়। বাবুল স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মোস্তাক আহমেদ রুহীর কাছের লোক আর চয়ন এমপির আপন চাচাতো ভাই। তবে নির্বচনে এমপির সমর্থনও ছিল বাবুলের পক্ষে। নির্বাচনের সময় দুগ্রুপের বেশ কয়েকবার মারামারি হয়। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষের থানায় মামলাও রয়েছে।
নিয়মানুযায়ী প্রতিবছর উপজেলা প্রশাসন হাট বাজার ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এ বছর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সরকার নির্ধারিত দরে ইজারা নিতে আগ্রহী কেউ শর্ত পূরণ করে সিডিউল জমা দিতে পারেনি। ফলে ওই সিডিউল বাতিল হয়। এ কারণে ভূমি অফিস প্রতিসপ্তাহে খাস কালেকশনের জন্য উন্মোক্ত ডাক দেন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ দর হাকানো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কালেকশন করতে অনুমতি দিয়ে আসছেন। শুধুমাত্র কোরবানি ঈদের সময় একমাসের জন্য খাস কলেকশন দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার দুপুরে সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খাস কালেকশনের জন্য উন্মোক্ত ডাকের আহবান করা হয়। ডাক প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই মুস্তাফিজুর রহমান চয়নের গ্রুপ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই আব্দুল ওয়াদুদ রতন নিজেদের নামে বাজার নিতে উভয় পক্ষে কয়েকশত সমর্থক নিয়ে মহরা দিতে থাকে। ডাক প্রক্রিয়া শুরু হওয়া মাত্রই সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনেই উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে পুলিশ এসে পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
আহত আব্দুল ওয়াদুদকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুছ বাবল জানান, চয়ন আমার সাথে নির্বাচনে হেরে বেপরোয়া হয়ে গেছে। সদরের হাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও অ্যাসিল্যান্ডের উপস্তিতিতে খাস কালেকশনের প্রক্রিয়া শুরু করে। পরে চয়ন ও তার লোকজন জোরপূর্বক তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এতে আমাদের ২০-৩০ জন লোক আহত হন।
কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষে আহত ৩৩ জনের মতো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ময়মনসিংহ পাঠানো হয়েছে।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান জানান, বর্ষপুঞ্জির ইজারা না হওয়ায় খাস কালেকশনের জন্য প্রতি সপ্তাহের উন্মোক্ত ডাকের ব্যবস্থা করা হয়। শনিবার দুপুরে ডাকের প্রক্রিয়া শুরু হলে উপস্থিত লোকজনের মধ্য থেকে দুগ্রুপ সংঘর্ষ জরিয়ে পড়ে। পরে পুলিশকে খবর দিলে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুল হক জানান, উপজেলা শহরের হাট খাস কালেকশনের জন্য উপজেলা প্রশাসন ডাকের আহবান করে। শনিবার ডাক প্রক্রিয়া শুরু হলে কিছু লোক সংঘর্ষে জরালে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে। আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে উপজেলা শহরের প্রতি মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। এখনো কোনো অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।