অবশেষে বোট ক্লাবের সভাপতির পদ ছাড়লেন বেনজীর
নয় বছর ধরে আঁকড়ে ধরে রাখার পর অবশেষে ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতির পদ ছাড়লেন দুর্নীতি অভিযোগে নতুন করে আলোচনায় আসা সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। তিনি গত ১৩ জুন দেশের বাইরে থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এ পদে ক্লাবের উপদেষ্টা ব্যবসায়ী রুবেল আজিজকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা ক্লাবের নির্বাহী সদস্য নাছির ইউ মাহমুদ আমাদের সময়কে বেনজীর আহমেদের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বোট ক্লাব সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালে ঢাকা বোট ক্লাব প্রতিষ্ঠার পরের বছর ২০১৫ সালে সভাপতির দায়িত্বে আসেন র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। এরপর থেকেই সেখানে স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছেন তিনি। র্যাবে সাড়ে চার বছর দায়িত্ব পালনের পর তিনি আইজিপির দায়িত্ব আসেন। এরপর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরও সভাপতির পদ ছাড়েননি তিনি। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে টানা ৯ বছর ধরে এ পদ আঁকড়ে রেখেছেন বেনজীর। সাধারণ সদস্যরা তার ভয়ে কথা বলার সাহস করতো না। ক্লাবের সাধারণ বার্ষিক সভা-এজিএম ও নির্বাচন দেওয়ার জন্য দাবি তোলার সাহসও ছিল না সদস্যদের।
গত মে মাসে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধানে নামলে আড়ালে চলে যান তিনি। এরপর থেকে তাকে প্রকাশ্যে কোথাও দেখা যায়নি। পরে বেনজীর আহমেদের স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্লাবের সভাপতির পদ ৯ বছর আঁকড়ে ধরে রাখার বিষয়টি বেআইনি উল্লেখ করে পদ ছাড়তে তাকে দুটি উকিল নোটিশ পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এরপরই তিনি গত ১৩ জুন দায়িত্ব ছেড়ে ই-মেইলে চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে চিঠিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জরুরি প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থান করছেন জানিয়ে তিনি লিখেছেন, এ অবস্থায় ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে। তার বিদেশ অবস্থান দীর্ঘায়িত হতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
এদিকে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বোট ক্লাবের নির্বাচন ও এজিএম হওয়ার কথা রয়েছে। ৩ হাজার সদস্যের এই ক্লাবে ১১ সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে সভাপতি বেনজীর ও উপদেষ্টা রুবেল আজিজ ছাড়া ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন শহিদুল ইসলাম (শাহেদ)। এ ছাড়া অন্যান্য পদে রয়েছেন বখতিয়ার আহমেদ খান, আজিজ আল মাহমুদ, নাছির ইউ মাহমুদ, জহির আহমেদ, সোয়েব আহমেদ, ইব্রাহিম ফাতেমী, অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও মার্কিন উর রশীদ।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
জানা যায়, এলিট ফোর্স র্যাবের মহাপরিচালক থাকাকালীন সময়ে বেনজীর আহমেদ ঢাকা বোট ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এরপর বেনজীর আহমেদ আইজিপির দায়িত্ব নিলেও সরকারি চাকরির নীতিমালা অমান্য করে তিনি বোট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা সমালোচনা থাকলেও বেনজীরের প্রভাবের কারণে কেউ কিছু বলার সাহস দেখায়নি। একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়েও এতো বেশি পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে এই বাণিজ্যিক ক্লাবে কীভাবে থাকলেন তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে গত ১৮ এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
দুদকের অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে বেনজীর পরিবারের নামে দেশের ছয়টি জেলায় ৭০২ বিঘা জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাজধানীতে বহুতল ভবন, ১২টি ফ্ল্যাট, ৩৩টি ব্যাংক একাউন্ট ও ২৫টি কোম্পানিতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের সন্ধান পেয়েছে দুদক। তিন দফায় আদালতের নির্দেশনা পেয়ে এসব সম্পদ জব্দও করেছে দুদক।