খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকটে সেন্টমার্টিনবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক কক্সবাজার
১৩ জুন ২০২৪, ১৯:৫৭
শেয়ার :
খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকটে সেন্টমার্টিনবাসী

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। টেকনাফ থেকে কোনো নৌযান সেন্টমার্টিনে যেতে পারছে না। সেখান থেকে আসতেও পারছে না। নৌযান দেখলেই মিয়ানমার থেকে ছুটে আসে গুলি। গত সাত দিন ধরে চলছে এই পরিস্থিতি। পরপর তিন দফা গুলির ঘটনার পর সেন্টমার্টিনের খাদ্য ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে অনেকটা বন্দীদশায় চরম ভোগান্তিতে দিন পার করছেন দ্বীপটির প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা। 

চলমান সমস্যা সমাধানে আজ বুধবার থেকে দ্বীপটিতে বিকল্প পথে খাদ্যদ্রব্য পাঠানোর পরিকল্পনা করছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কিংবা সকল ধরনের নৌ চলাচল শুরু হবে তা জানে না কেউ।

জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও দ্বীপবাসীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ভেতরে সংঘাত চলছে। এর মধ্যে দেশটির সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের দিকেও গুলি ছোড়া হচ্ছে। গত ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার সময় নির্বাচনী সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী ট্রলারে মিয়ানমার থেকে গুলি ছোড়া হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ট্রলার। পরদিন নাফ নদীর বদরমোকাম মোহনায় নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকায় পণ্যবাহী ট্রলারে গুলির ঘটনা ঘটে। এতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটিতে সাতটি গুলি লাগে। এরপর থেকে ভয়ে সব নৌযান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে সেন্টমার্টিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ খাদ্য সংকটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের যোগাযোগসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের একমাত্র মাধ্যম নৌযান। দ্বীপের বাসিন্দারা বলছেন, ‘নৌযান বন্ধ থাকায় গতে এক সপ্তাহ ধরে টেকনাফের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সেন্টমার্টিনের। খাদ্য ও পণ্যবাহী বোট চলাচল না করায় সেন্টমার্টিনের দোকানগুলোতে মজুত খাদ্যপণ্য শেষ হতে চলেছে। ইতোমধ্যেই পণ্যের অভাবে প্রায় ৬০ শতাংশ দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে।’  

দ্বীপের মুদি দোকানি মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, ‘ট্রলার বন্ধ থাকায় গত কয়েক দিন টেকনাফ থেকে কোনো মালামাল আনতে পারিনি। চাল ছাড়া দোকানে কিছু নেই। এভাবে চলতে থাকলে দ্বীপের মানুষদের না খেয়ে থাকতে হবে।’

সেন্টমাটিন দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খান বলেন, ‘দ্বীপে প্রায়ই দুই শতাধিক দোকানপাট রয়েছে। মালামাল না থাকায় এর মধ্যে ১২০টির মতো দোকান বন্ধ রেখেছে মালিকরা। যেসব দোকান খোলা রয়েছে তাতেও সামান্য পরিমাণ মালামাল রয়েছে। যা আজকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আজ-কালের মধ্যে মালামাল না আনতে পারলে দ্বীপবাসীকে অনাহারে দিন কাটাতে হবে।’

সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, বোটে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখে ট্রলারচালক ও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এতে নৌপথে ট্রলার নিয়ে যাতায়াত করতে কেউ রাজি হচ্ছে না। তাছাড়া ওই পথ ছাড়া সেন্টমার্টিনে আসার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা বা রুটও নেই। প্রতিদিন সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌপথে ৬-৭টি বোটের মাধ্যমে শতাধিক মানুষ আসা-যাওয়া করার পাশাপাশি খাদ্য ও নিত্যপণ্য বহন করা হতো। নৌযান বন্ধ থাকায় মানুষ খুব বিপদে আছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের খাদ্য সংকট ও যাতায়াতের কথা বিবেচনা করে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বিকল্প পথে চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে যে কোনো সময় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে পণ্যবাহী ট্রলার ছেড়ে যাবে। তবে এই পথে চর থাকার কারণে ঝুঁকিও রয়েছে।’ 

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে খাদ্যপণ্যসহ কোনো মালামাল আনা যাচ্ছে না। অনেক দোকান খালি পড়ে আছে। এর দ্রুত সমাধান করতে হবে।’

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, ‘গুলির ঘটনায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে নৌযান বন্ধ রয়েছে। আমরা বিকল্প রুট হিসেবে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমে জেটি ঘাটের প্রস্তাব দিয়েছি। এটি ব্যবহার করা গেলে সেখান থেকে নৌযান চলবে। এ ছাড়া বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। শাহপরীরদ্বীপ ঘাট ব্যবহারে সমস্যা হলে সরাসরি কক্সবাজার থেকে পণ্য সরবরাহ করা হবে।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) মো. ইয়ামিন বলেন, ‘সেন্টমার্টিন পণ্য পাঠাতে আজ একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা যেকোনো উপায়ে দুই একদিনে দ্বীপটিতে পণ্য পাঠাতে বদ্ধপরিকর।’