‘বর্তমান বাজেটে জাতিকে শিক্ষিত করা যাবে না’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘বর্তমান বাজেটে জাতিকে শিক্ষিত করা যাবে না, এবং শিক্ষার উন্নয়নও সম্ভব নয়। বাজেটে শিক্ষা বরাদ্দ খুবই কম। যে জাতি শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বেশি দিয়েছে তারাই ততো বেশি উন্নতি করেছে। যারা শিক্ষা বরাদ্দ কম করেছে তারা জাতি হিসেবে শক্তিশালী হতে পারেনি। বর্তমান সরকারের চাওয়া শিক্ষা নয় ক্ষমতা।’
বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দ মাত্র ১২ শতাংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশে শিক্ষার বরাদ্দ দিনদিন কমে যাচ্ছে। কিন্তু সমৃদ্ধ দেশ গড়তে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় এখন নোংরা ছাত্র রাজনীতির কারখানা।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে শিক্ষা গবেষণা সংসদ-ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত ‘শিক্ষার গুণগত মান ও বাজেট-২০২৪’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাবির সাবেক এই প্রো-ভিসি বলেন, ‘শিক্ষার মান এখন অনেক খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর জ্ঞান চর্চা হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের প্রবাহ থেমে গেছে। আইন লঙ্ঘন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন ভিসি চাটুকারিতা করে ৮ বছর পদে ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘দলীয় বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে, তা বন্ধ হওয়া জরুরি।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
সেমিনারে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রবের সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক নূরুন নবী মানিকের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রফেসর এ.টি.এম. ফজলুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বিশিষ্ট কবি ও নজরুল গবেষক আবদুল হাই শিকদার, অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল আজিজ, অধ্যাপক কবিরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. দেওয়ান এম এ সাজ্জাদ প্রমুখ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যক্ষ ও গবেষক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ।
এ সময় প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য শুধু শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করলেই যথেষ্ঠ। শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। এই পরিবর্তন করতে হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবর্তন করতে হবে। এইজন্য গণজাগরণ তৈরি করতে হবে। ইউরোপের রেনেসাঁর মতো জনগণের মধ্যে রাষ্ট্র ও সরকার পরিবর্তন করতে হবে। ভোটারবিহীন সরকারকে গণ আন্দোলনের মাধ্যমে পতন ঘটাতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। শিক্ষা থেকে ইসলাম ধর্মের বিষয়গুলো বাদ দিতে চক্রান্ত চলমান। ভারতীয় ভাবধারা দিয়ে হিন্দুয়ানী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে গভীর চক্রান্ত চূড়ান্ত করেছে বর্তমান আওয়ামী সরকারের দোসররা। এখন শিক্ষার বাজেট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান বাজেট কোনোভাবেই শিক্ষাবান্ধব নয়। বাজেটে শিক্ষা বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার গবেষণামূলক কাজে বাজেটে বরাদ্দ খুবই কম।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বিশিষ্ট কবি ও নজরুল গবেষক আবদুল হাই শিকদার বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। শিক্ষার মধ্যে শব্দ আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। আজকাল ভারতের আশির্বাদপুষ্ট সংবাদমাধ্যম লাশকে মরদেহ বলে। এশিয়া ও আফ্রিকার কোনো দেশে বাংলাদেশের মতো এত কম বরাদ্দ শিক্ষায় নেই। শিক্ষায় বরাদ্দটা ব্যয় নয়, এটা বিনিয়োগ। আমরা সেই বিনিয়োগ সঠিকভাবে করতে পারি না।’
প্রফেসর এ.টি.এম. ফজলুল হক বলেন, ‘ব্রিটিশরা শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভাজন তৈরি করে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মোটেও আশানুরূপ হয়নি। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের যত ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার তার প্রতিফলন বাজেটে দেখিনি। শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো নমুনাও দেখিনি।’
বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘বাংলাদেশের যে সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে চায়। তারা শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে বাজেটে যথাযথ অর্থ বরাদ্দ দেবে না। সরকার পার্শ্ববর্তী দেশের শিক্ষার অনুরূপ শিক্ষা চালু করতে চায়।’
প্রবন্ধ উপস্থাপক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জিডিপির তুলনায় বরাদ্দ বিগত অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। অথচ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষা খাতে ৬ শতাংশ বরাদ্দ থাকার কথা। শিক্ষায় বরাদ্দ কোনো খরচ নয়, বরং বিশাল বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করে। যেসব দেশ এটি বুঝতে পেরেছে, সেসব দেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে।’