কোটা নিয়ে সরকারের নোংরা খেলা প্রতিহত করতে হবে: এবি পার্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ জুন ২০২৪, ১৮:১৮
শেয়ার :
কোটা নিয়ে সরকারের নোংরা খেলা প্রতিহত করতে হবে: এবি পার্টি

সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালে সর্বোচ্চ আদালতের রায় ব্যবহার করাকে সরকারের নতুন দুরভিসন্ধি ও নোংরা খেলা অভিহিত করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) নেতারা। তারা বলেন, ‘সরকারের এই নোংরা খেলা প্রতিহত করতে হবে।’

আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার। এ সময় বক্তব্য দেন সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও সহকারী সদস্যসচিব ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি।

নেতারা বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর নৃ-গোষ্ঠী ছাড়া অন্য কোনো ধরনের কোটার ব্যবস্থা রাখা হবে সংবিধানের লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রের মৌলিক নীতির পরিপন্থী। মুক্তিযুদ্ধের পোষ্য কোটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকারের অপমান এবং স্বাধীনতার মৌলিক অঙ্গীকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’

সংবাদ সম্মেলনে নেতারা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট দিয়েছে তাতে দুই তৃতীয়াংশ সরকারের বেতন ও বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে খরচ হয়ে যাবে। এই বাজেটে খরচের সবচেয়ে বড় খাত হলো বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ খাত। এ খাতে বাজেটের ১৪.২ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। ৪ লাখ কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সরকার এই বাজেটে নতুন করে আরও ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা নতুন ঋণ নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।’

তারা বলেন, ‘উন্নয়নের যে বাজেট রাখা হয়েছে সেটা পুরাটাই ঋণ নির্ভর। দেখে মনে হচ্ছে সরকার আইএমএফ থেকে তৃতীয় কিস্তি সুরক্ষিত করতে মরিয়া, ডলারের রিজার্ভ এবং পেমেন্টের ভারসাম্যের ওপর চাপ কমাতে দিশাহারা। প্রস্তাবিত বাজেট ঋণ ও ঘাটতি ভিত্তিক হওয়ায় এর ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা চাওয়া ছাড়া তার আর কোনো বিকল্প নেই। এভাবে ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছর পর দেখা যাবে করের সব টাকা দিয়েও ঋণ শোধ করা যাবে না এবং ঋণ করে ঋণের সুদ শোধ করতে হবে। অর্থাৎ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে দেশ দেউলিয়া হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার।’

বৈধ আয়কর দাতাদের সর্বোচ্চ কর ৩০ শতাংশ আর অবৈধ কালো টাকার মালিকদের কর ১৫ শতাংশ করার সমালোচনা করে নেতারা বলেন, ‘এটা সরকারের কৌশলগত ডামি ও চুরি নীতির ধারাবাহিকতা। নিজস্ব লোককে দিয়ে তারা যেভাবে বিরোধীদল বানিয়েছে তেমনি দলীয় লোকদের দুর্নীতি-লুটপাটের কালো টাককে বৈধ করে দেওয়ার এটা একটা নির্লজ্জ পদক্ষেপ।

নেতারা আরও বলেন, ‘বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৭ শতাংশ প্রস্তাব করা হলেও চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে প্রায় ৫.৮ শতাংশ। যদিও সরকারের দেওয়া তথ্য ও ডাটা বিশ্বাস করা কঠিন কারণ তারা সেখানেও নানা ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে থাকে।’

রাজস্ব সংগ্রহের পরিকল্পনাকে আকাশ কুসুম ও অবাস্তব আখ্যা দিয়ে নেতারা বলেন,‘এনবিআর কখনোই ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারেনি।’

শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্তদের ওপর করের বোঝা দিনদিন অসহনীয় মাত্রায় বাড়ছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারী সংস্থাগলো মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ বললেও বাস্তবে মূল্যস্ফীতি ২০-৪০ শতাংশ। এই বাজেট বাস্তবায়িতে হলে মূল্যস্ফীতি কমার বদলে আরও বাড়বে, দরিদ্র পরিবার বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ঋণখেলাপিদের দৌরাত্ম্য অব্যাহত থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটকে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকারাবদ্ধ বাজেট না বলে ‘দুর্নীতি, কালো টাকা ও ঋণখেলাপিবান্ধব দেশ দেউলিয়া করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাজেট’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এবি পার্টি মনে করে এতে আইএমএফ এবং ধনবাদী অলিগার্কদের জয় হয়েছে, হেরে গেছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ। এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, দুর্বল বিনিয়োগ ও খেলাপি ঋণের কোনো সুরাহা হয়নি। বলে তারা মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেইন, সহকারী সদস্যসচিব এম আমজাদ খান, এবি যুবপার্টির আহ্বায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, যুবপার্টির সদস্যসচিব হাদিউজ্জামান খোকন, মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব সেলিম খানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।