ভারতের সর্বকনিষ্ঠ এমপি হলেন রাজস্থানের যে গৃহবধূ
সম্প্রতি শেষ হওয়া ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ এমপি হিসেবে জয় পেয়ে রেকর্ড করেছেন রাজস্থানের গৃহবধূ সঞ্জনা জাটভ।
১৯৯৮ সালের পয়লা মে ভরতপুর জেলার ভুসাওয়ার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সঞ্জনা জাটভ। সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া সঞ্জনার বিয়ে হয় ২০১৬ সালে, ভরতপুর সীমান্ত সংলগ্ন আলওয়ার জেলার সমুচী গ্রামে। বিয়ের আগে থেকেই তার স্বামী কাপ্তান সিং রাজস্থান পুলিশে কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন।
স্বামীর উৎসাহে বিয়ের পরে স্নাতক শেষ করেন জাটভ। তার ইচ্ছা ছিল সরকারি চাকরিতে ঢুকবেন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাটভ বলেন, ‘শ্বশুরবাড়িতে কখনও আমাকে পুত্রবধূ বলে মনে করা হয় নি, পরিবারের মেয়ে হিসাবেই দেখা হয়েছে। আমাকে পড়াশোনা করতে দিয়েছেন এরা। স্বামী সরকারি চাকরিতে ছিলেন বলে, আমিও সরকারি চাকরি করব, এমনটাই ভাবতাম। তবে ভাগ্য যা ঠিক করে রেখেছে, বাস্তবে তো সেটাই হওয়ার, তাই না?’
তার স্বামী বলেন, ‘বিয়ের পরেও আমি ওকে স্নাতক-স্তরের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলি। নারীদের সম্পর্কে আমাদের পরিবারে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা রয়েছে। সঞ্জনা রাজনীতিতে সময় দিতে চাননি, কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম যে ও সঞ্জনা রাজনীতিতে যাক, পরিবার আর গ্রামের নাম উজ্জ্বল করুক।’
সঞ্জনা জাটভ যে শুধু স্নাতক ডিগ্রি পেয়েছেন, তা নয়। এরপরে তিনি আইন পড়েছেন, এলএলবি ডিগ্রিও পেয়েছেন। তার কথায়, এসবই সম্ভব হয়েছে তার স্বামী সবসময়ে পাশে থেকেছেন বলে।
সঞ্জনা জাটভের শ্বশুরবাড়িটা যৌথ পরিবার। সেখানে তাকে স্ত্রী, পুত্রবধূ আবার দুই সন্তানের মায়ের দায়িত্বও পালন করতে হয়। গ্রামে তাদের দোতলা বাড়িটির কাছেই আরেকটি বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়িতেই রান্নাঘরে বাসন মাজতে মাজতেই বিবিসির সঙ্গে কথা কথা বলছিলেন তিনি । তিনি বলেন, ‘বিয়ের দুবছর পর আমার ছেলে হয়। এখন ওর বয়স ছয় বছর আর মেয়ে চার বছরের।’
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
তার কথায়, ‘আমি যখন রাজনীতির কাজে যাই, তখন শাশুড়িই সন্তানদের দেখাশোনা করেন। তবে আমি কিন্তু ঘরের কাজও করি আবার রাজনীতিও করি।’
সঞ্জনা বলেন, ‘দিল্লিতে থাকলে সেখানকার কাজ করব, আবার ভরতপুরে থাকলে সেখানকার কাজ করতে হবে। কিন্তু যখন বাড়িতে থাকব, তখন পুরো সময়টাই সন্তানদের আর পরিবারের।’
ভোটের ফল ঘোষণার পরে জাটভের একটি ভিডিও খুব ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে তাকে নাচ করতে দেখা গেছে। সেই প্রসঙ্গ তুলতেই জাটভ হেসে ফেললেন। বলেন, ‘এত আনন্দ হয়েছিল যে আমি নাচতে শুরু করেছিলাম।’
সঞ্জনা বলেন, ‘আমার বাবা ট্রাক্টর চালাতেন। বাপের বাড়ির দিকে কেউ কখনও রাজনীতি করেননি। তবে, বিয়ের পর যখন তিনি শ্বশুরবাড়িতে আসেন, তখন তার মামা শ্বশুর ছিলেন গ্রামের ‘সর-পঞ্চ’ (গ্রামের প্রধান)। সেই থেকেই আমার প্রথম রাজনীতির প্রথম পাঠ শুরু হয়।’
তিনি আলওয়ার জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন আর সেটাই ছিল রাজনীতিতে তার প্রথম সিঁড়ি। তিনি রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর 'লড়কি হুঁ লড় সক্তি হুঁ' (আমি নারী, কিন্তু লড়াই করতে জানি) অভিযানেও যোগ দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
গত বিধানসভা নির্বাচনে আলওয়ারের কাঠুমার আসন থেকে চারবারের বিধায়ক বাবুলাল বৈরওয়ার টিকিট কেটে দিয়ে সঞ্জনা জাটভকে প্রার্থী করেছিল কংগ্রেস দল। কিন্তু নির্বাচনে তিনি মাত্র ৪০৯ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।
বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর লোকসভায় তিনি জিততে পারবেন, এমন আশা কীভাবে করেছিলেন, এই প্রশ্নের জবাবে সঞ্জনা বলেন, ‘জনগণ আমাকে অনেক ভালবাসা আর সাহস জুগিয়েছে। বিধানসভা ভোটে হেরে গেছি বলে মনেই হয়নি। দলও মনে করে নি যে আমি একজন পরাজিত প্রার্থী ছিলাম। তাই আমাকে এমপি টিকিট দিয়েছে। দলের বিশ্বাসের কারণেই আমি আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছি।’
সঞ্জনার জয়ের পরে সারা দেশে আলোচনা হচ্ছে তার কম বয়স নিয়ে। তবে রাজস্থানের সবথেকে বেশি আলোচিত বিষয় হল যে তিনি বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মার জেলায় তার দলের প্রার্থী তথা প্রাক্তন সংসদ সদস্য রামস্বরূপ কোলিকে হারিয়েছেন।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মার নিজের জেলা ভরতপুরে বিজেপির প্রার্থীকে হারিয়ে দেওয়া কত বড় জয় তার কাছে?
সঞ্জনার কথায়, ‘আমি তো তাকে পরাজিত করিনি, জনগণ হারিয়েছে তাকে। তবে শুধু তার নিজের জেলায় নয়, তার নিজের গ্রাম আটারি গ্রামের তিনি পরাজিত হয়েছেন। সেখান থেকেও আমি বেশি ভোট পেয়েছি।’
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
তার তরুণ বয়স এবং রাজনীতিতে তেমন একটা অভিজ্ঞতা না থাকায় ভরতপুরের উন্নয়নও বাধার সম্মুখীন হতে পারে, এরকম একটা আশঙ্কা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে সঞ্জনা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছেন, ‘আমি ভরতপুরকে উন্নয়নের নতুন দিশা দেখাব।’