সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কী সমস্যায় পড়তে পারেন মোদি-শাহ
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেও দল হিসেবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। ম্যাজিক ফিগার ২৭২ থেকে বেশ অনেকটাই পেছনে আছে নরেন্দ্র মোদির দল। ফলে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তাদের ভরসা করতে হবে এনডিএ জোটের সহযোগী দলগুলির উপর। আর এটাই বিজেপির সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। বলা হয়, মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার আসলে মোদী-শাহের সরকার। অর্থাৎ, এই সরকারের দুই প্রধান মুখ নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। ২০১৯ সালেও এই দুই মুখই বিজেপিকে বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দেয়। ফলে খাতায় কলমে এনডিএ জোট থাকলেও মোদি-শাহকে কখনোই জোটসঙ্গীদের উপর নির্ভর করতে হয়নি। অভিযোগ, নির্ভর করতে হয়নি বলে জোটসঙ্গিদের সে অর্থে কখনো গুরুত্বও দেয়নি বিজেপি। ফলে যত দিন গেছে এনডিএ ছেড়ে বেড়িয়ে গেছে একাধিক দল। পাঞ্জাবের শিরোমনি আকালি দল, শিবসেনার উদ্ধব শিবির, দক্ষিণের এআইএডিএমকে-র মতো গুরুত্বপূর্ণ দল বিজেপিকে ছেড়ে চলে গেছে। যারা থেকে গেছে, তারাও বার বার অভিযোগ করেছে, জোটের ভিতর তাদের কার্যত গুরুত্ব নেই। এই পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালের নির্বাচন তাদের সামনে নতুন পথ খুলে দিয়েছে।
বিজেপি সূত্রের বরাতে ডয়চে ভ্যালে জানিয়েছে, নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু ছাড়াও লোক জনশক্তি পার্টির নেতা চিরাগ পাসওয়ানও বিজেপির উপর চাপ তৈরি করতে শুরু করেছেন। মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি নিয়ে দর কষাকষি শুরু হয়ে গেছে। কোনো কোনো সূত্র থেকে এমনো শোনা যাচ্ছে, নীতীশ কুমার উপ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো পদ চেয়েছেন। চন্দ্রবাবুরও চাহিদা এমনই।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
মোদি-শাহের সামনে আরেকটি চ্য়ালেঞ্জ তৈরি করতে পারেন তাদের দলেরই একটি অংশ। বিজেপির সূত্রের দাবি, সংঘ-ঘনিষ্ঠ নীতিন গডকড়ীর মতো নেতারা মোদী-শাহের উপর চাপ তৈরি করতে পারেন। মন্ত্রিসভা বদলের দাবি উঠতে পারে বিজেপিরই ভেতর থেকেই। কারণ, বিজেপিরই একাংশ মনে করছে, এনডিএ জোট জিতলেও এই ভোট মোদি-শাহের বিরুদ্ধে গেছে।
ভোটের আগে ২৮টি দল নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছিল বিজেপি। তাদের মোট আসন সংখ্যা ২৯৩। এর মধ্য়ে বিজেপি একা পেয়েছে ২৪০টি আসন। অর্থাৎ, ম্য়াজিক ফিগার থেকে ৩২টি আসন কম। চন্দ্রবাবুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিএস) পেয়েছে ১৬টি আসন। এবং নীতিশ কুমারের জেডিইউ পেয়েছে ১২টি আসন। অর্থাৎ, টিডিএস এবং জেডিইউ-এর মোট আসন সংখ্যা ২৮। এই দুই দলই বিভিন্ন সময় কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোটে ছিল। জেডিইউ ২০২৪ এর আগে তৈরি ইন্ডিয়া জোটেও ছিল। ফলে ইন্ডিয়া জোট ইতিমধ্যেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে প্রকাশ্য়েই জোটের নেতারা বলতে শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
উদ্ধব ঠাকরে ও কংগ্রেসের নেতা সলমন খুরশিদও সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন। নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নায়ডু যদি শিবির পরিবর্তন করেন, তাহলে বিজেপির এনডিএ-এর কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে না। তারা নেমে আসবে ২৬৫টি আসনে। অন্য়দিকে ইন্ডিয়া জোটের কাছে এখন ২৩৪টি আসন আছে। জেডিইউ এবং টিডিএস-এর সমর্থন পেলে তারা পাবে ২৬২টি আসন। সেক্ষেত্রে কোনো পক্ষের কাছেই সরকার বানানোর মতো সংখ্য়াগরিষ্ঠতা থাকবে না।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপির জন্য় সবচেয়ে সুবিধাজনক কৌশল হলো, ইন্ডিয়া জোটে ভাঙন ধরানো। ইন্ডিয়ার বেশ কিছু নেতার সঙ্গে বিজেপি কথা বলার চেষ্টা করছে বলে সূত্র জানাচ্ছে। যে কারণে, ৪ জুন রাতেই জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন ইন্ডিয়া জোটের কোনো কোনো নেতা। বুধবার ফের তাদের বৈঠকে বসার কথা। ইন্ডিয়া জোটের নেতারাই বলছেন, বিজেপি চেষ্টা করবে ইন্ডিয়া জোট ভেঙে এনডিএ-এর নম্বর আরো বাড়িয়ে নিতে। সে ক্ষেত্রে এনডিএ থেকে কোনো দল বেরিয়ে গেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা যাবে।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
ভারতীয় সংবিধানের নিয়ম মেনে সব চেয়ে বেশি আসন পাওয়া দলকেই রাষ্ট্রপতি প্রথমে সরকার গড়তে ডাকবেন। সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া বিজেপিকেই ডাকা হবে, তা নিশ্চিত। এরপর সংসদে বিজেপিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। আর তখনই এই সব রাজনৈতিক সমীকরণ সামনে আসবে।