সমীকরণে এগিয়ে বিজেপি
ভারতের সরকার গঠন ।। শনিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন মোদি ।। মোদিকে শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরদিন অর্থাৎ গতকালই নতুন সরকার গঠন নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড় লক্ষ করা গেছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের নেতৃবৃন্দ গতকাল গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে নতুন সরকার গঠনে একমত হয়েছেন। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের নেতারাও অঙ্ক মেলাতে বৈঠক করেছেন। তবে সরকার গঠনের সমীকরণে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি জোট। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী শনিবারই নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন।
এনডিটিভি জানিয়েছে, নতুন সরকার গঠনের লক্ষ্যে নরেন্দ্র মোদি ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা গতকাল পদত্যাগ করেছেন। নরেন্দ্র মোদির পদত্যাগপত্র ভারতের রাষ্ট্রপতি ধ্রুপদী মুর্মু গ্রহণ করেছেন। সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, শনিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন মোদি। এটি হলে ইতিহাসের খাতায় নাম লেখাবেন তিনি। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পর তিনিই টানা তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।
নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে গতকাল চলতি সরকারের মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মোদি বলেন, জয়-পরাজয় রাজনীতির অংশ, আমরা গত ১০ বছর ভালো করেছি। সামনের দিনেও আমরা ভালো করব। এ বছর মোদি-অমিত জুটি বেশ উচ্চাশা করেছিলেন। তারা বারবার ‘আব কি বার ৪০০ পার’ বলে আওয়াজ তুলেছেন। কিন্তু তাদের আশার প্রতিফলন ঘটেনি। গত দশ বছর ছিল মোদি ম্যাজিকের বছর। ২০১৪ সালে বিজেপি এককভাবে ২৮২ আসনে জয়ী হয়েছিল, ২০১৯ সালে সেটি বেড়ে ৩০৩ আসন পেয়েছিল। কিন্তু এ বছর দলটি এককভাবে ২৪০ আসনে জয়ী হয়েছে, যা সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২-এর চেয়ে ৫৩ আসন কম।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
এ কারণে সরকার গঠনের জন্য এবার বিজেপিকে জোটসঙ্গীদের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। তবে এনডিএ জোটের দখলে ২৯৩ আসন রয়েছে।
বিজেপি জোটের নেতৃবৃন্দ গতকাল সর্বসম্মতিক্রমে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার গঠনে রাজি হয়েছেন বলে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে। বৈঠকে অংশ নিতে বিভিন্ন রাজ্য থেকে নেতৃবৃন্দ দিল্লিতে উড়ে গিয়েছিলেন। নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেনÑ অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টির নেতা এন চন্দ্রবাবু নাইডু, জনতা দলের (ইউনাইটেড) নেতা ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার, শিবসেনা ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, এলজেপি (রাম বিলাস) নেতা চিরাগ পাসোয়ানসহ বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতারা।
মোদির নতুন সরকারের সমীকরণে নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুকে চাবিকাঠি হিসেবে ধরা হচ্ছে। গতকাল বৈঠকেও মোদির পাশেই তাদের দেখা গেছে। নীতিশ কুমারের কাছে রয়েছে ১২ আসন, চন্দ্রবাবু নাইডুর হাতে রয়েছে ১৩ আসন, জনশক্তি (রাম বিলাস) পেয়েছে ৫ আসন, একনাথ শিন্ডের শিবসেনার আছে ৭ আসন। এ ছাড়া ছোট ছোট আঞ্চলিক দলগুলো একটি-দুটো করে আসন পেয়েছে। সব কিছুর পর টেকসই সরকার গঠনে মোদিকে নাইডু-নীতিশকে হাতে রাখতেই হবে। কিন্তু নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে জোট কতদিন টেকে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। কেননা দুজনেরই রয়েছে ‘পাল্টি’ খাওয়ার ইতিহাস। ২০১৪ সালে নাইডু বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধলেও ২০১৮ সালে অন্ধ্র প্রদেশের বিশেষ প্যাকেজ না পাওয়ায় জোট থেকে বেরিয়ে যান। তবে এবার ভোটের আগে আবার মোদির সঙ্গে হাত মেলান। নীতিশেরও দলবদলের ইতিহাস দীর্ঘ। কখনো বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন আবার কখনো ছেড়েছেন। ২০১৪ সালে এনডিএ জোটে থাকলেও ২০১৯ সালে বিজেপি জোট ছাড়েন নীতিশ। এ ছাড়া কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনের ব্যাপারেও নীতিশের বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু এবার লোকসভার ভোটের আগে তিনি ইন্ডিয়া ছেড়ে এনডিএতে চলে যান। এ কারণে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্ব মেনে নিলেও এই দুজন যে বিজেপির সঙ্গে দর-কষাকষি করবেন তা অনুমেয়।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
অন্যদিকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেছেন, তাদের পক্ষ থেকে এই দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। গতকাল ইন্ডিয়া জোটের নেতৃবৃন্দও বৈঠক করেন। গতকাল পর্যন্ত কংগ্রেস শিবির আনুষ্ঠানিকভাবে পরাজয় স্বীকার করেনি। বরং কংগ্রেস শিবিরও জয়ের আনন্দে ভাসছে। এই শিবিরে সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় আসন না থাকলেও গত দশ বছরের মধ্যে কংগ্রেস সবচেয়ে ভালো করেছে। এককভাবে দলটি পেয়েছে ৯৯ আসন। আর ইন্ডিয়া জোট অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। এই জোটের দখলে রয়েছে ২৩২ আসন। সরকার গঠন করতে তাদের আরও ৩৯ আসনের প্রয়োজন হবে। এ ক্ষেত্রে তারাও সমীকরণের শেষ দেখতে চাইবে।
মোদিকে শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা
বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট জয়ী হওয়ায় নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মঙ্গলবার চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, বাংলাদেশের জনগণ এবং আমার (প্রধানমন্ত্রী) পক্ষ থেকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকারকে ১৮তম ভারতীয় লোকসভা নির্বাচনে জয়ের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
মোদিকে উদ্দেশ করে চিঠিতে লেখা হয়, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নেতা হিসেবে, আপনি ভারতের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। আপনার বিজয় ভারতের জনগণের আপনার নেতৃত্ব, প্রতিশ্রুতি এবং দেশের জন্য আত্মোৎসর্গের প্রতি আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের প্রমাণ। এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সব ক্ষেত্রেই অব্যাহত থাকবে।