নরেন্দ্র মোদি কি জোট সরকার চালাতে পারবেন?
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। সরকার গঠনের জন্য লোকসভায় ন্যূনতম ২৭২ টি আসন প্রয়োজন হয়। সেখানে বিজেপি পেয়েছে ২৪০টি। ফলে এককভাবে সরকার গঠনের সুযোগ নেই তার। এনডিএ জোটের অন্যান্য শরীকদের নিয়ে সরকার গঠন করতে হবে তাকে। বিগত এক দশকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় কখনো মোদিকে শরীকদের দ্বারস্থ হতে হয়নি। তাই প্রশ্ন উঠেছে শরীকদের এতটা গুরুত্ব দিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার চালাতে পারবেন কি না।
গতকাল মঙ্গলবার ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগণনা শেষে দেখা যায়, নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বধীন এনডিএ ২৯৩ আসনে জয় পেয়েছে। তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারেনি বিজেপি। তাদের আসন সংখ্যা ২৪০টি। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন অন্তত ২৭২টি আসন। তাই সরকার গঠনের জন্য শরীকদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে বিজেপিকে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টির সমর্থন বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে। ওই দুই নেতা এখন এনডিএ জোটে থাকলেও দুজনের রাজনৈতিক কৌশল আর জোট বদল করার রেকর্ড রয়েছে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর প্রধান নীতীশ কুমার একটা সময়ে বিজেপির জোট সঙ্গী থাকলেও তিনি কয়েক বছর আগে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন এবং বিজেপি-বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনের অন্যতম কারিগরও ছিলেন তিনি।
তবে এবছরের জানুয়ারিতে আবারও জোট বদল করে এনডিএ-তে যোগ দেন তিনি। বিহারে এখন এনডিএ-র সঙ্গে সরকার চালাচ্ছেন তিনি, এবং লোকসভা নির্বাচনেও এই জোটে সামিল ছিল তার দল।জে ডি (ইউ) বিহারে ১২ টি আসন জিতেছে, এতটা তারা প্রত্যাশা করেননি। আবার বিজেপিও সে রাজ্যে ১২টি আসন পেয়েছে। এনডিএ-র অন্যান্য সঙ্গীদের মধ্যে এলজেপি (রাম বিলাস) পাঁচটি এবং জিতন রাম মাজির দল একটি আসন পেয়েছে। অর্থাৎ বিহারে এনডিএ পেয়েছে মোট ৩০টি আসন।পূ র্ণিয়ায় নির্দল প্রার্থী পাপ্পু যাদব একটি আসনে জয়ী হয়েছেন।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি বা টিডিপি পেয়েছে ১৬টি আসন। লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি ওই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
টিডিপি বিধানসভার ১৭৫ টি আসনের মধ্যে ১৩৫ টিতে জিতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। টিডিপি আগেই এনডিএ-র শরিক।
ঘটনাচক্রে, নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডু দুজনেই কিছুদিন আগে পর্যন্ত মোদি সরকার-বিরোধী অবস্থানে ছিলেন। সেই কারণেই এনডিএ জোটে তারা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। সরকার গঠন করতে হলে মি. মোদি ও বিজেপিকে এখন পুরনো এই জোটসঙ্গীদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরনোর পরে এই দুই নেতা এখন হয়ে উঠেছেন ‘কিংমেকার’।
প্রবীণ সাংবাদিক সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বলছেন, "নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর ক্রাচ ছাড়া এই সরকার চলতে পারবে না এবং নীতীশ কুমার তো হাওয়ার দিক বদলের মতো জোট বদলিয়ে ফেলেন।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
“এখন এই দুটি ক্রাচ বিজেপির গলায় ঘণ্টার মতো হয়ে গেছে। তারা দুজনেই পুরানো ওস্তাদ খেলোয়ার এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। দুজনেরই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা রয়েছে। এই ক্ষমতার সমীকরণে তারা নিজেদের পাওনা গণ্ডা বুঝে নেবেন। তারা নিজেদের দাবি তুলে ধরে বলবেন যে আমাদের এটা চাই,তবেই জোটে থাকব,” বলছিলেন সঞ্জীব শ্রীবাস্তব।
গত ১০ বছর যখন সরকার চালিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি, তখন ক্ষমতা পুরোটাই তার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের হাতেই থেকেছে, অন্য কেউ ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন না। কিন্তু এখন জোট সরকার হলে সেখানে অন্যরাও অংশগ্রহণ করবে, তাদের কথাও শুনতে হবে, তবেই সরকার চলতে পারবে।
সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বলছিলেন, ‘এর অর্থ হল জোট ধর্ম মেনে, বাজপেয়ী মডেল যদি গ্রহণ করা হয়, তবেই সরকার চালনা সম্ভব হবে।’
অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার যখন গঠিত হয় ১৯৯৯ সালে, তখন এনডিএ জোটে ২৪টি দল ছিল। সেই সরকার টিকেছিল পাঁচ বছর।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জোটের মধ্যে সমন্বয় সাধনের ক্ষমতাই বাজপেয়ী সরকারকে পাঁচ বছর টিকিয়ে রেখেছিল।