চিলমারীতে খাদ্যগুদামে কৃষকের তালিকায় পুলিশ সদস্যের নম্বর!
কুড়িগ্রামের চিলমারী সরকারি খাদ্যগুদামে ভুয়া কৃষকের তালিকায় ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে। লটারির মাধ্যমে কৃষকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে প্রকাশিত সেই তালিকার প্রায় বেশিরভাগ কৃষকের নামের সঙ্গে ব্যবহৃত ফোন নম্বরের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। এসময় এক কৃষককে ফোন দিলে ওই নম্বরের অপর পাশে থেকে চিলমারী মডেল থানার এক পুলিশ সদস্য কথা বলেন।
ধান বেচাকেনার প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করা হলেও কিভাবে ভুয়া কৃষকের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় কৃষকরা। এদিকে ভুয়া তালিকার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে মোট ২২৯ জন কৃষকের কাছ থেকে ৬৮৮ মেট্রিক টন ধান, ৪৫ টাকা প্রতিকেজি দরে উপজেলার ৪০ জন মিলারের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৬ মেট্রিক টন চাল ও প্রতি কেজি ৩৪ টাকা দরে ৯০ মেট্রিক টন গম ক্রয় করা হবে।
চিলমারী এলএসডি ভবনে তালিকা টাঙানো উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে মোট ২২৯ জন কৃষকের মধ্যে এ পর্যন্ত ২০ জন কৃষক ৬০ মেট্রিক টন ধান গুদাম জাত করেছেন। তবে ওই ২০ জন কৃষকের তালিকা দেখাতেও অপরাগতা প্রকাশ করেন দায়িত্বরত মাইদুল ইসলাম নামে এক কর্মচারী। তিনি বলেন, ‘তালিকা নিতে হলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের প্রত্যয়ন দেখাতে হবে।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা খাদ্যগুদাম চত্বরে ধান বোঝাই ট্রলি অপেক্ষা করছে। এ সময় কৃষকদের উপস্থিতি না থাকলেও কয়েকজন ধান ব্যবসায়ীকে দেখা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিন্ডিকেট চক্র নানা কারসাজির মাধ্যমে কৃষকের ভুয়া তালিকা দেখিয়ে গুদামে ধান দিচ্ছে। পরে তালিকার সূত্র ধরে উপজেলার থানাহাট, রমনা, রাণীগঞ্জ, নয়ারহাট, অষ্টমীর ও চিলমারী ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কৃষকদের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তারা চিলমারীর বাসিন্দা নন বলে জানান।
তালিকাভুক্ত থানাহাট ইউনিয়নের কৃষক আমিনুল ইসলাম যার ভোটার আইডি ৮৬৭০০৮৫১৩৬ কে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি খুলনার বাসিন্দা বলে জানান। জিল্লুর রহমান ভোটার আইডি ৭৩২০৩০৫৬০৫ নামে আরেকজন তালিকাভুক্ত কৃষকের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি চিলমারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দিলীপ কুমার রায় বলে পরিচয় দেন। অষ্টমীর চর ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কৃষক আব্দুল মালেক যার ভোটার আইডি নং ১৯২০২০০৯২০০ তার সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি রং নম্বর বলে ফোন কেটে দেন।
নয়ারহাট ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কৃষক সাদেক হোসেন যার ভোটার আইডি ৪৬২১৪১৮২৩৭ যোগাগোগ করা হলে তিনি লালমনির হাট বড়বাড়ী এলাকার বলরাম বলে পরিচয় দেন। একইভাবে অন্য ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একই অবস্থা দেখা গেছে।
এছাড়াও অনেক ফোন নম্বর ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানা যায়।
থানাহাট ইউনিয়নের পূর্বমাচাবান্দা এলাকার আমিনুল ইসলাম বীর বলেন, ‘প্রতিবছরই সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের সময় অভিযোগ ওঠে। ধান ক্রয়ের সময় কৃষকরা ধান গুদামে দিতে না পারলেও ভুয়া তালিকায় একটি সিন্ডিকেট চক্র ধান দেয়। অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া হলে কিভাবে ভুয়া কৃষক অর্ন্তভুক্ত হয় তা খতিয়ে দেখা জরুরি। ’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুমার প্রণয় বিষাণ দাস বলেন, ‘কৃষকরা অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন করেছিল। আমরা ইউএনও স্যারকে আবেদনকৃত তালিকা সরবরাহ করেছি। তিনি লটারি করেছেন। এ বিষয়ে আমার জানা নেই। ’
চিলমারী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বসুনিয়া বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৬০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। ধান সংগ্রহের সময় কৃষকের কৃষি কার্ড ও ভোটার আইডি মিলিয়ে ধান নেওয়া হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হেমন্ত কুমার বর্মনের সঙ্গে কথা বলতে মোবাইলে ফোন দেওয়া হলে তিনি কোনো সাড়া দেননি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাইফুল কবির খান বলেন, ‘কৃষি অফিসের ব্লক সুপার ভাইজার মাঠ পরিদর্শন করে যে তালিকা প্রণয়ন করে সে তালিকা ধরে আমরা ধান ক্রয় করি। এখানে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ’