৪৯ বছরেও আকর্ষণীয় জোলি অভিনয়ে
বিশ্বে সেরা অভিনেত্রীদের তালিকা করলে তার নাম অবশ্যই থাকতে হবে। আবার সেরা সুন্দরীর তালিকা থেকেও তাকে বাদ দেওয়া যাবে না। সেরা প্রেমিকা হিসেবেও তার জুড়ি মেলা ভার। তিনি অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। আজ তার জন্মদিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের লসঅ্যাঞ্জেলেসে জন্মগ্রহণ করেন জোলি। ৪৯ বছরেও আকর্ষণীয় এ তারকাকে নিয়েই এ আয়োজন
১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাইবর্গ টু’ সিনেমায় অর্ধরোবট ও অর্ধমানবীর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই জোলি প্রথমবারের মতো মূল নায়িকা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। ব্যবসায়িকভাবে এটি ফ্লপ হওয়ায় পরবর্তী এক বছর হতাশা ও অনুশোচনায় সিনেমা জগৎ থেকে তিনি নিজেকে আড়ালে রাখেন। এর পর ১৯৯৫ সালে ‘উইদাউট অ্যাভিডেন্স’ সিনেমায় পার্শ্বঅভিনেত্রী হিসেবে হলিউডে আবার ফিরে আসেন। একই বছর ‘হ্যাকারস’ মুভিতে অসামান্য অভিনয় প্রতিভা দেখান। ফলে সিনেমা তেমন ব্যবসাসফল না হলেও জোলি হয়ে ওঠেন নিউইয়র্ক টাইমসের মতো খ্যাতনামা পত্রিকার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সেই যে চলার পথ সুগম হয়, এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
সাফল্যের ঝুড়ি
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
অ্যাকশন-কমেডি সিনেমা ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ’-এ সাবেক স্বামী ব্র্যাড পিটের সঙ্গে জুটি বেঁধে এমন এক দম্পতির চরিত্রে অভিনয় করেন, যেখানে স্বামী-স্ত্রী দুজন বিপরীত পক্ষের সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে কর্মরত। ছবিটি সুনাম না কুড়ালেও জোলি-পিটের রসায়ন দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচকদেরও দৃষ্টি কাড়তে সফল হয়েছিল। এটি পরবর্তী এক যুগ ধরে জোলির সর্বাধিক আয়কৃত সিনেমা হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছিল। ২০০৬ সালে রবার্ট ডি নিরোর পরিচালিত ‘দ্য গুড শেফার্ড’-এ ম্যাট ড্যামনের বিপরীতে একজন সিআইএ অফিসারের অবহেলিত স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। পরের বছর ‘অ্যা মাইটি হার্ট’ নামের ডকুমেন্টারি ঘরানার ড্রামা সিনেমায় নিজের অভিনয় দক্ষতার শতভাগ ঢেলে দেওয়ার ফলে তিনি শুধু সমালোচকদের প্রশংসাই পাননি, এর সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো গোল্ডেন গ্লোবের জন্য মনোনয়ন লাভ করেছিলেন। এ ছাড়া একই বছর ক্লিন্ট ইস্টউড পরিচালিত ‘চেঞ্জলিং’ নামের ১৯২৮ সালের পটভূমিতে গড়ে ওঠা গল্পের সিনেমায় হারানো ছেলেকে ফিরে পাওয়া এক মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই সিনেমায় সুনিপুণ অভিনয়শৈলী প্রদর্শনের ফলে জোলি ওই বছর একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ডের জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত মায়ের অকাল মৃত্যুর ফলে তিনি বছর দুয়েকের মতো শোবিজ জগৎ থেকে দূরে ছিলেন। এর পর ‘সল্ট’-এর মাধ্যমে ২০১০ সালে আবার পর্দার সামনে উপস্থিত হন। এই সিনেমা তাকে চতুর্থবারের মতো গোল্ডেন গ্লোবে মনোনয়ন লাভের সুযোগ এনে দিয়েছিল।
পর্দার পেছনে সফল
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো ‘অ্যা প্লেস ইন টাইম’ নামক ডকুমেন্টারি নির্মাণের মধ্য দিয়ে পরিচালক হিসেবে নাম লেখান জোলি। এর প্রায় বছরচারেক পর নির্মাণ করেন ‘ইন দ্য ল্যান্ড অব ব্লাড অ্যান্ড হানি’ নামক বসনিয়ার যুদ্ধভিত্তিক প্লটের ওপর গড়ে ওঠা প্রেমকাহিনিনির্ভর সিনেমা। ওই বছর গোল্ডেন গ্লোবে ‘বেস্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম’ ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পায় এটি। ২০১৪ সালে তিনি নির্মাণ করেন ‘আনব্রোকেন’ সিনেমাটি। ২০১৫ সালে মুক্তি পায় তার পরিচালিত ‘বাই দ্য সি’। পরিচালনার পাশাপাশি এতে তিনি অভিনয়ও করেন। ২০১৭ সালে তার পরিচালিত সর্বশেষ সিনেমা ‘ফার্স্ট দে কিলড মাই ফাদার’ মুক্তি পায়। এ ছাড়া প্রযোজক হিসেবেও খ্যাতি কুড়িয়েছেন জোলি।
মানবিকতায়ও অনন্য
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা
অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজক- এই পরিচয়গুলো ছাপিয়ে জোলিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখে তার সামাজিক কর্মকাণ্ড। ২০০১ সালে কম্বোডিয়ায় লারা ক্রফটের শুটিং চলাকালীন তিনি প্রথমবারের মতো এক মানবহিতৈষীর অবদান নিজ চোখে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পান। তখন থেকেই তার মনের ভেতর অসহায় ও নিপীড়িত মানবসমাজকে সাহায্য করার ইচ্ছা জাগে। ২০০১ সালের ২৭ আগস্ট জোলিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে সম্মানিত করা হয়। পরবর্তী এক যুগ তিনি প্রায় ৪০টি রিফিউজি ক্যাম্প পরিদর্শনের মাধ্যমে দুস্থদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। ২০১২ সালে ইউএনএইচসিআর তাকে ‘স্পেশাল এনভয়’ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুতর রিফিউজি সমস্যাগুলো সমাধানের গুরুদায়িত্ব তার কাঁধে অর্পণ করে। মানবকল্যাণকর কাজে অতুলনীয় অবদানের সম্মানার্থে জোলি নানা সময়ে বেশ কিছু মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ও খেতাবের অধিকারী হয়েছেন। ২০০৫ সালে এতিমখানার শিশুদের আইনি অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই অভিনেত্রী একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান পরবর্তী সময়ে শরণার্থী শিশুদের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেও কাজ করে।