মাদারীপুরেও স্ত্রীর নামে শত শত বিঘা জমি কিনেছেন বেনজীর
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ মাদারীপুরে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। নামমাত্র মূল্যে স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে জেলার রাজৈরে কিনেছেন ২৭৬ বিঘা জমি।
জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ অবসরে যাওয়ার মাত্র ৫৯৪ দিন আগে স্ত্রীর নামে এসব জমি ক্রয় করেন। জমিগুলো মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সাতপাড় গ্রামের ডুমুরিয়া মৌজায় অবস্থিত। আইজিপি থাকা অবস্থায় ২০২১ ও ২০২২ সালের বিভিন্ন সময় ১১৩টি দলিলে এসব জমি কেনেন বেনজীর। এসবের দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে মোট ১০ কোটি ২২ লাখ টাকা। হিসেব করে দেখা গেছে, বিঘা প্রতি জমির দাম পড়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। অথচ বাজার মূল্য এরচেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৭৬ বিঘা জমির অধিকাংশই বেনজীর আহমেদ ক্ষমতার অপব্যহার করে কিনেছেন। যারা জমি বিক্রি করতে চাননি তাদেরকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। কেউ জমি লিখে দিতে না চাইলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্ত্রীর নামে জোর করে ফসলি জমি লিখে নিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। আর এতে সহায়তা করেছেন তৈয়ব আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। পুলিশের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তৈয়বের মাধ্যমেই সব জমি কেনাবেচা হয়েছে। আর জমি লিখে না দিলে নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে অনেককে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
জানা গেছে, রাজৈর ১১৩টি দলিলে ২৭৬ বিঘা ছাড়াও শিবচরের ঠেঙ্গামারা মৌজায় ২০১৫ সালে ৫ কাঠা জমি কেনেন বেনজীর।
রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের ভাষারাম সেন বলেন, ‘২৪ একর ৮৩ শতাংশ ফসলি জমি আমাদের বংশীয় লোকদের। এই জমি সবটুকুই কিনে নেন বেনজীর আহমেদ। বিঘাপ্রতি সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছেন। প্রায় দুই বছর আগে ভয়ভীতি দেখিয়ে এই জমি লিখে নেন বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবার। প্রথমে চারদিক থেকে জমি কিনে নেন তিনি, মাঝখানে আমাদের জমি থাকায় সেটা লিখে দিতে বাধ্য করেন।’
সাতপাড় ডুমুরিয়া গ্রামের সরস্বতী রায় (৭০) নামে এক বৃদ্ধা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা জমি দিতে চাইনি। ভয় দেখিয়ে জমি লিখে নেন বেনজীর। এই জমিতে ফসল হতো। লিখে নেয়ার পর আমাদের চাষাবাদ করার আর কোনো জমিই অবশিষ্ট নেই। এই ফসলি জমিটুকু অনেক কষ্ট করে ধরে রাখছিলাম, কিন্তু সেটা আর রক্ষা হয়নি।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বড়খোলা গ্রামের বাসিন্দা রসময় বিশ্বাস বলেন, ‘বেনজীর আহমদ আমাদের কাছ থেকে ৩২ শতাংশ জমি নিয়েছেন।’
একই ধরনের কথা জানালেন পার্শ্ববর্তী কদমবাড়ি এলাকার সুকদেব বালার ছেলে অমল বালা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে। জমি লিখে না দিলে বিমানে করে বাড়িতে নামতে হবে, এমনটাও বলা হয়েছে। তাদের অত্যাচারে অনেকেই জমি লিখে দিয়েছেন।’