চলচ্চিত্র পরিচালকের বিরুদ্ধে মেরে কানের পর্দা ফাটানোর অভিযোগ
চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের পরিচালক রুবেল আনুশের বিরুদ্ধে জিম্মি করে মারধর, ছিনতাই ও মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তার সঙ্গে কাজ করা প্রোডাকশন ম্যানেজার দ্বীন ইসলাম দিনার। গত বৃহস্পতিবার মগবাজারের একটি ক্লাবে এই ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দিনারের সঙ্গে ছিলেন পরিচালক ইমাম হোসেন শামীম, যিনি সম্প্রতি আনুশের কয়েকটি নাটকে নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন।
দিনার ও শামীম অভিযোগ করেন, মিটিংয়ের কথা বলে রাত পৌনে ৪টা পর্যন্ত আটকে রেখে তাদের ওপর শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়েছেন আনুশ।
জানা গেছে, মূলত শুটিংয়ের পাওনা টাকার লেনদেন নিয়েই এই বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। দুই পক্ষই একে-অপরের কাছে টাকা পাবে বলে দাবি করছে।
এ বিষয়ে নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দ্বীন ইসলাম দিনার। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘গত রোজার ঈদের আগে থেকে এখন পর্যন্ত পরিচালক রুবেল আনুশের সঙ্গে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নিকলীতে (কিশোরগঞ্জ) বেশ কয়েকটি নাটকের শুট করি। শুটিং শেষে পরিচালকের কাছে প্রডাকশন বাবদ পাওনা হই ১৪ লাখ ১৬ হাজার ৬৩০ টাকা। এর মধ্যে সাবেক বকেয়া ৯৪ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা; ‘‘প্রেম পদ্য’’, ‘‘গল্পটা সামান্যই’’, ‘‘দুই দিনের দুনিয়া’’ এই তিনটি নাটকের বকেয়া ৩ লাখ ৯৪ হাজার। ‘‘লটারি’’ নাটকে পাওনা ৯৫ হাজার ৯৫৫ চাকা। ‘‘তোমার প্রেমে’’ নাটকে ৯০ হাজার ২৬০ টাকা। ‘‘ফিদা’’ নাটকে পাওনা ছিল ৭ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ টাকা। এই পাওনা টাকাগুলো ৩০ মে দেওয়ার কথা ছিল।’
অভিযোগপত্রে দিনার জানান, মগবাজারে তাকে মারধর করে মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিনিয়ে নেন আনুশ। এমনকি জোরপূর্বক তার কাছ থেকে ভিডিও স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
লিখিত অভিযোগে দিনার বলেন, ‘আমি রাত ৮টার সময় মগবাজার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে যাই। তারপর আমাকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাছে একটি ক্লাবে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী শুটিং প্ল্যানের কথা বলে রুবেল আনুশের নেতৃত্বে তার দলবল আমাকে জিম্মি করে। রাত ৮টা থেকে ভোর ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালায়। বলেন যে, ‘‘এই মুহূর্তে তুমি ২০ লাখ টাকা আনাও, তারপর চলে যাও।’’ কিন্তু শেষমেশ আমরা যে পাওনাদি তার কাছে পাব, সেই টাকা আর চাইতে পারব না, আগামী মাসে নগদ ৫ লাখ টাকা তাদেরকে দেব, বিনিময়ে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোটর সাইকেলের কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ফেরত পাব, এই মর্মে আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক ভিডিও জবানবনন্দি রেকর্ড করেন। এরপর ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আমাকে রাত ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে ছেড়ে দেন।’
এরপর চিকিৎসা নিতে উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান দিনার। এ বিষয়ে ওই অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, ‘সেখান থেকে বের হয়ে দ্রুত উত্তরার ইবনে সিনা হাসপাতালে যাই। তখন কর্তব্যরত ডাক্তার জানায় যে আমার ডান পাশের কানের পর্দা ফেটে গেছে।’
গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রোডাকশন ম্যানেজার দিনার বলে, ‘আমি তো কালকে (বৃহস্পতিবার) মরেই যেতাম। আমার অণ্ডকোষে লাত্থি মারছে। প্রায় আধা ঘণ্টা অজ্ঞান ছিলাম। পৌনে ৪টা পর্যন্ত নির্যাতন করছে। আমি ওনাদের হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেছি, ‘‘ভাই এ পৃথিবীতে আমার মা-বোন ছাড়া কেউই নেই, এদেরকে দেখতে হবে।’’ কাজটা তারা প্ল্যান করে করছে। আমি আগে বুঝতে পারিনি একদমই।’
এই ঘটনার সুবিচার আশা করে দিনার বলেন, ‘এটার বিচার না হলে ওরা তো এমনটা আরও অনেকের সঙ্গে করবে। আমি কোনোভাবে জীবন নিয়ে বাঁচতে পারছি।’
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
অন্যদিকে, এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন রুবেল আনুশ। তিনিও প্রায় ৬ লাখের মতো টাকা পান জানিয়ে বললেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আসছে, সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। দিনার যেমন আমার কাছে টাকা পায়, আমিও তার কাছে টাকা পাই প্রায় ৬ লাখের মতো।’
মগবাজারের ওই ক্লাবে মারধরের ব্যাপারে জানতে চাইলে আনুশ বললেন, ‘আমি কাউকে মারধর করিনি। আমার প্রোডাশন টিমের কয়েকজন ছিল। তারা উত্তেজিত হয়ে মারধর করেছে।’
অন্যদিকে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার রাতে দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে ডিরেক্টরস গিল্ড। উপস্থিত ছিলেন রুবেল আনুশ, দিনার, শামীমসহ আরও অনেকে। অভিযোগ রয়েছে, মিডিয়ার বাইরের লোকজন জড়ো হওয়ারও।
আগামী ৮ জুন দুই পক্ষকে পাওনার বিষয়ে কাগজপত্র দেখানোর দিন-তারিখ ধার্য করেছে ডিরেক্টরস গিল্ড।
আরও পড়ুন:
‘এভাবে বিয়ে করা নাকি অর্থহীন’