রোহিঙ্গাদের জন্য আবারও রেশন বাড়াচ্ছে ডব্লিউএফপি
আগামীকাল থেকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য রেশন প্রতি মাসে জনপ্রতি ১০ মার্কিন ডলার থেকে ১১ মার্কিন ডলারে উন্নীত করবে। এটি এ বছরের দ্বিতীয় বৃদ্ধি এবং আগস্টের মধ্যে ১২.৫০ মার্কিন ডলারের সম্পূর্ণ রেশন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর পথে এক ধাপ এগিয়ে।
ডব্লিউএফপি বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি চলতি বছরের শুরু থেকেই খাদ্য সহায়তা প্যাকেজে পুষ্টিচাল অন্তর্ভুক্ত করেছে। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা এবং ফর্টিফাইড এ চালে নিয়মিত চালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে। এতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্ধিত এই সহায়তা ইতিমধ্যেই কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শতভাগ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে।
২০২৩ সালে তহবিল সংকটের কারণে ডব্লিউএফপিকে তার সম্পূর্ণ খাদ্য সহায়তা কমিয়ে মাসে ১২ মার্কিন ডলার থেকে ১০ মার্কিন ডলার এবং পরে ৮ মার্কিন ডলারে নামিয়ে আনতে হয়েছিল, যার ফলে রোহিঙ্গাদের প্রতিদিনের খাদ্য চাহিদার বরাদ্দ মাত্র ২৫ সেন্টে নেমে এসেছিল। এ বছরের শুরুতে ৮ মার্কিন ডলার থেকে ১০ মার্কিন ডলারে আংশিক বৃদ্ধি করা হলেও ক্ষুধা ও অপুষ্টি অব্যাহত ছিল, যা ক্যাম্পগুলোতে ইতিমধ্যে বিদ্যমান ভয়াবহ পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
গত নভেম্বর পর্যন্ত এই জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশ মানুষ পর্যাপ্ত খাবার জোগাড় করতে পারেনি। জুনে এই হার ছিল ৮০ শতাংশ। শিশুদের মধ্যে পুষ্টির দ্রুত অবনতি ঘটেছে, সামগ্রিক তীব্র অপুষ্টির (জিএএম) হার ১৫.১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং এটি ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্ক্যালপেল্লি বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব পূর্ণ রেশনে ফিরে আসা জরুরি। এটি কেবল তাৎক্ষণিক দুর্ভোগই দূর করবে না, সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আশ্রয়, রান্নার জ্বালানির মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির ওপর চাপও কমাবে, যা এখন অর্থসংকটের সম্মুখীন।’
ক্যাম্পের দুর্দশা থেকে বাঁচতে ২০২৩ সালে প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরে নেমেছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ৫৬৯ জন সে যাত্রাপথে মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ। সাম্প্রতিক সময়ে, ক্যাম্পগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই সহিংস ঘটনা ঘটছে।
গত ২৪ মে ক্যাম্পগুলোর একটি অংশে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় চার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে, ডব্লিউএফপি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে গরম খাবার এবং উচ্চ পুষ্টি-গুণসম্পন্ন বিস্কুট প্রদান করে। এর দুদিন পর ঘূর্ণিঝড় রিমাল কক্সবাজার ও ভাসানচরসহ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে। সৌভাগ্যক্রমে, বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তবে ডব্লিউএফপি এবং তার অংশীদারেরা জুনে বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
ডম স্ক্যালপেল্লি আরও বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাই। শুধু তহবিল সংগ্রহ নয়, বরং অক্লান্ত প্রচারণার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটকে তাদের সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডায় শীর্ষে রাখার জন্য প্রতিটি পর্যায়ে তাদের প্রচেষ্টা মানবিকতার সর্বোত্তম উদাহরণ। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিষয়ে স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদের সহায়তা একান্ত প্রয়োজন।’