২৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি কমছে

আবু আলী
৩০ মে ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
২৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি কমছে

দেশে মূল্যস্ফীতির পারদ ঊর্ধ্বমুখী। টানা ১৪ মাস ধরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রথম মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়ায়। এরপর তা আর কখনোই ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ ১৪ মাস ধরে আপনি যত পণ্য ও সেবা কিনছেন, তার জন্য আপনাকে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে গড়ে ৯ শতাংশ বেশি দাম দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি নিম্ন আয়ের মানুষের সংকট আরও বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় নতুন বাজেটে

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। তবে বাজেটে এমন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ পদক্ষেপগুলোর অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন খাতে সরকারের ভর্তুকি হ্রাসের চিন্তা।

বরাবরই সরকার বাজেটে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি ও প্রণোদনা দিয়ে থাকে, যার সুবিধা সরাসরি ভোগ করে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে বিভিন্ন খাত থেকে ভর্তুকি কমানো হবে। ফলে আগামীতে সমাজের নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের কষ্ট আরও বাড়বে।

সাধারণত খাবারের দাম বাড়লে মানুষের কষ্ট বাড়ে। কারণ, খাবার কিনতেই আয়ের অর্ধেকের বেশি খরচ করেন গড়পড়তা মানুষ। অর্থনীতিবিদদের হিসাবে, গরিব মানুষকে খাবার কিনতে আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত খরচ করতে হয়। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ মানুষই খাবারের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। সেখান থেকে আগামী অর্থবছরে কমিয়ে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হচ্ছে। ফলে ভর্তুকি কমছে ২৭ হাজার কোটি টাকা।

আর চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ সংশোধিত বাজেট বরাদ্দ ৯৮ হাজার কোটি টাকাকে ভিত্তি ধরলে ভর্তুকি কমিয়ে আনার পরিমাণ হতে পারে অন্তত ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

ভর্তুকি ও প্রণোদনার বাইরে নগদ ঋণ ও অগ্রিমকেও ভর্তুকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে আর্থিক প্রতিষ্ঠানবহির্ভূত সংস্থাগুলোকে ঋণ দিতে অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন, পাটকল করপোরেশন

ইত্যাদিকে ঋণ দেওয়া হলেও এ টাকা সরকার আর ফেরত পায় না। ফলে এগুলোর জন্য বরাদ্দও এক ধরনের ভর্তুকি।

সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের প্রথম, দ্বিতীয় কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। জুনের মধ্যে তৃতীয় কিস্তির টাকা পাবে। তবে আইএমএফের ঋণের টাকা পেতে বিভিন্ন শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমানোর শর্তও রয়েছে। এজন্য মূলত সরকার ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ কমাচ্ছে। কিন্তু এতে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের চাপ বাড়বে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, মূল্যস্ফীতির বড় চাপের মধ্যেই থাকতে হবে। এজন্য সরকারকে সে বিষয়ে দক্ষতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, খাদ্য সংকট হলে আন্তর্জাতিক বাজারেও মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এজন্য কৃষি ও খাদ্যের প্রতি সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

জানা গেছে, সারে ভর্তুকি কমানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ এবং ওএমএসসহ বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা হচ্ছে। খোলাবাজারে স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিতে ভর্তুকি চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা কমানো হচ্ছে। প্রতিবছর সরকার ওএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে গরিব মানুষের কাছে চাল বিক্রির মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। চলতি বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৮ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয় ৫ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতির হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে দরিদ্র মানুষের মধ্যে স্বল্পমূল্যে খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধি করা হয়। সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের খাদ্য ভর্তুকি থেকে ৩২২ কোটি টাকা কমিয়ে আগামী বাজেটে ৫ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে। প্রতিবছর চাল ও গমের চাহিদার একটি অংশ সরকার বিদেশ থেকে আমদানি করে।

অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, কোনোভাবেই এমন কোনো খাতে বরাদ্দ কমানো যাবে না, যেখানে মানুষের কষ্ট বাড়ে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে যেখানে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার, সেখানে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।