খালের পাড়ে বসানো হবে ক্যামেরা, ময়লা ফেললে আইনি ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ মে ২০২৪, ১৮:৪৪
শেয়ার :
খালের পাড়ে বসানো হবে ক্যামেরা, ময়লা ফেললে আইনি ব্যবস্থা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার খালগুলোতে ক্যামেরা বসা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ ছাড়া খালে কেউ ময়লা ফেললে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে টেকসই নগরায়ন’ শীর্ষক ‘৮ম নগর সংলাপ’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আতিকুল ইসলাম।

ঢাবির ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ এবং ২০টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কনসোর্টিয়াম আরবান আইএনজিও ফোরাম যৌথভাবে এই সংলাপ আয়োজন করেছে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশে পদার্পণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। উন্নত বাংলাদেশে জনগণের জন্য সব পর্যায়ে স্মার্ট সেবা নিশ্চিত হবে। স্মার্ট নগর গড়তে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কাজ করছে। আমরা দেখছি অনেকে অসচেতনভাবে গৃহস্থালির বর্জ্য খাল, ডোবা, নালা, ড্রেনে ফেলে দেয়। সারফেস ড্রেনে ও খালে এমন কোনো ময়লা নেই যা পাওয়া যায় না।’

তিনি বলেন, ‘পরিত্যক্ত লেপ, তোশক, সোফা, লাগেজ, খাট, ক্যাবল, টায়ার, কমোড, ফুলের টব, রিকশার অংশবিশেষ, টেবিল, চেয়ার, বেসিন, ব্যাগ, প্লাস্টিকের বিভিন্ন পাত্রসহ নানা পরিত্যক্ত পণ্য। এগুলোর কারণেই মূলত পানিপ্রবাহ নষ্ট হচ্ছে, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। খালের পাড়ে ক্যামেরা বসানো হবে। কেউ ময়লা ফেললে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘একসময় ৫৪টি খাল ছিল ঢাকায়। সময়ের ব্যবধানে খালগুলো দখল হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশন খালগুলো বুঝে পাওয়ার পর উদ্ধার করে খালের উন্নয়ন করছি। কিছুদিন আগে মোহাম্মদপুরে লাউতলা খালে অবৈধ ১০ তলা ভবন ভেঙে দিয়েছি। ভবন সরিয়ে নিতে ১৫ দিন সময় দেওয়ার পরেও সরিয়ে না নেওয়ায় আমরা নিলামে মাত্র ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। দখলদারদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুস্থ ও আধুনিক নগর গড়তে ডিএনসিসি অনলাইনভিত্তিক স্মার্ট সেবা বাড়াতে কাজ করছে। বর্তমান প্রজন্ম সেকেলে পদ্ধতিতে চলতে চায় না। তারা চায় অনলাইনভিত্তিক স্মার্ট সেবা। ডিএনসিসিতে ইতোমধ্যে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স গ্রহণ এবং ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে। ঘরে বসেই নগরবাসী এসব সেবা পাচ্ছে। সবার ঢাকা অ্যাপ চালু করেছি। যে কেউ ডাউনলোড করে শহরের যেকোনো সমস্যা ছবি তুলে শেয়ার করে দেন, দ্রুতই সমাধান করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘একসময় সেবা পেতে অনেক সময় লাগত ও ভোগান্তি ছিল। আমরা সেবাগুলো সহজীকরণে গুরুত্ব দিচ্ছি। ডিএনসিসি হটলাইন চালু করেছি। হটলাইন নম্বর ১৬১০৬ এ ২৪ ঘণ্টা যে কোনো অভিযোগ জানাতে পারছেন নগরবাসী। গতকাল ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমা ও গাছ উপড়ে পড়ার তথ্য জানিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কুইক রেসপন্স টিম পৌঁছে ব্যবস্থা নিয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ডিএনসিসির হটলাইনে ২৮১ জন নাগরিক ফোন করেছেন। তাদের সেবা দেওয়া হয়েছে।’

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে অন স্ট্রিট স্মার্ট পার্কিং চালু করেছি। গুলশানে এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ভিত্তিক ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পরীক্ষামূলক চালু করেছি। আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎপ্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎপ্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেটির বাস্তবায়নও শুরু করেছি।’

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে ডিএনসিসি এলাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এমন ভারী বৃষ্টিতেও ডিএনসিসি এলাকার প্রধান প্রধান সড়কগুলো থেকে শতভাগ পানি নিষ্কাশন করা হয়েছে। সারারাত ডিএনসিসির ১০টি কুইক রেসপন্স টিম এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করে ডিএনসিসি এলাকার সব প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছি।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পরই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সবার ছুটি বাতিল করেছি। নগর ভবনের কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেন্টার থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। আমি নিজে মনিটরিং সেন্টার পরিদর্শন করেছি। সার্বক্ষণিক হটলাইন নম্বর চালু রাখাসহ কুইক রেসপন্স টিম ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করেছে। সবাই এখনো কাজ করছে এবং আবারও বৃষ্টি হলে সর্বদা প্রস্তুত থাকবে।’