জি সিরিজের সঙ্গে শিরোনামহীনের দ্বন্দ্ব চরমে
সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি সিরিজের ব্যানারে প্রকাশ পেয়েছিল শিরোনামহীন ব্যান্ডের ‘জাহাজী’, ‘ইচ্ছেঘুড়ি’ ও ‘বন্ধ জানালা’ অ্যালবামগুলো। ২০১৮ সালে এই তিন অ্যালবামের গানগুলোর কপিরাইট সনদ ব্যান্ডটিকে দিয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট বোর্ড। কিন্তু তা সত্ত্বেও অ্যালবাম তিনটি নিজেদের ইউটিউবসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে চলেছে জি সিরিজ। এমনটাই জানিয়েছেন শিরোনামহীন ব্যান্ডের দলনেতা জিয়াউর রহমান জিয়া।
এদিকে, কপিরাইট বোর্ডের রায়ের বিপরীতে আদালতে একই বছর একটি আপিল করে জি সিরিজ। আদালত তখন স্ট্যাটাসকো জারি করে এবং অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটিকে ফাইল বুক তৈরি করাসহ প্রমাণাদি দাখিল করতে বলে। কিন্তু জি সিরিজ সেটা না করে এখন শুধু সময়ক্ষেপণ করে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন জিয়া।
ব্যান্ডের এই দলনেতা বলেন, ‘কপিরাইট অফিসে অভিযোগ দাখিলের পর দীর্ঘসময় তা যাচাই-বাছাই করে আমাদেরকে কপিরাইট সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। যখন জি সিরিজ আবার এই রায়ের বিরোধিতা করেছে, তখন বিষয়টি আবারও কপিরাইট বোর্ডে উঠেছে। যেহেতু বোর্ড বসতে সময় লাগে, তাই এভাবে আরও চার-পাঁচ মাস কেটে গেল। অবশেষে বোর্ড (এটা একটি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট) বসল, সেখান থেকে রায় দেওয়া হয় যে, জি সিরিজের সার্টিফিকেটগুলো বাতিল করে শিরোনামহীনকে কপিরাইট দিয়ে দেওয়া হলো। তখন আমাদের নামে কপিরাইট সার্টিফিকেট ইস্যু হলো। তারপর আমরা আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করার সুযোগ পায়। এর আগে তো এতদিন পাইনি, ২০০৪ সাল থেকে জি সিরিজ সেগুলো ব্যবহার করে আসছে। এরপর যখন আমরা আমাদের চ্যানেলে গানগুলো আপলোড করি, তখন দেখা যায় জি সিরিজ ইউটিউবে স্ট্রাইক, গ্লোবালি ব্লকসহ নানা ধরনের অ্যাকশন নিচ্ছে। ইউটিউবের বিভিন্ন পলিসি নানাভাবে অ্যাপ্লাই করেছে তারা, কিন্তু তখনও আমরা এসব বিষয়ে অতটা বুঝতাম না, কারণ নতুন ব্যবহারকারী ছিলাম। ওই অবস্থাতে জি-সিরিজ উচ্চ আদালতে একটা আপিল করে। আদালত তখন এই মামলার আচরণ বোঝার জন্য ৬ মাসের একটি স্ট্যাটাসকো (স্থিতি অবস্থা) ঘোষণা করে। এরপর তাদেরকে আরও ৬ মাস সময় দেওয়া হয় ফাইল বুক তৈরি করাসহ প্রমাণাদি দাখিলের জন্য। কিন্তু এই এক বছরে তারা কোনো ফাইল বুক বানায়নি, কাগজপত্রও দাখিল করেনি। এ থেকে পরিষ্কার যে জি সিরিজ কোনো ন্যায়বিচার চাইছে না, আসলে তারা চাইছে সময়টা নষ্ট করে আরও বেশি অর্থ উপার্জন করতে, আরও বেশি বাণিজ্যিক সুবিধা উপভোগ করতে।’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘জি সিরিজ সেটিই করেছে এবং এখন ২০২৪ সালে এসে তারা আমাদের “বন্ধ জানালা” গানটায় স্ট্রাইক দিয়েছে। এ রকমভাবে ক্রমাগত দুই-তিনটি স্ট্রাইক দেওয়া হলে একটি ইউটিউব চ্যানেল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইউটিউবে শিরোনামহীনের প্রায় মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার এবং অসংখ্য গান রয়েছে। এ ধরনের একটি চ্যানেলের ওপর এমন আঘাত হানা আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে কতটুকু বড় করে? এছাড়া তারা আমাদের গানগুলো নিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য করে যাচ্ছে, বিভিন্ন বিদেশি প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করে দিচ্ছে, সেজন্য তো আমাদের কোনো রয়্যালিটি দেয়নি তারা। এসব বিষয়ে আমরা আর মুখ বন্ধ করে থাকতে চাই না, এর শেষ দেখতে চাই। আমরা চাই না বে-আইনিভাবে কোনো কোম্পানি আমাদের শিল্পীদের ক্ষতি করুক।’
ইতিমধ্যে শিরোনামহীনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জি সিরিজকে চিঠি পাঠিয়েছে কপিরাইট বোর্ড। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনকেও বিষয়টি অবহিত করেছে ব্যান্ডটি। সেই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘জি সিরিজ নামে মিউজিক লেবেল প্রতিষ্ঠান, শিরোনামহীন ব্যান্ডের নিজস্ব ও কপিরাইটকৃত বন্ধ জানালা, হাসিমুখ, জাহাজী, পাখি, ইচ্ছেঘুড়ি, ভালোবাসা মেঘ ও ক্যাফেটেরিয়া ইত্যাদি গান বিদেশি কিছু কোম্পানির কাছে বিক্রি করে অবৈধভাবে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। যেসব অর্থের বিপরীতে সরকারকে কোনো ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদান করছে না। জি সিরিজের এরকম বে-আইনি ও দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে গানগুলোর প্রকৃত স্রষ্টা ও মালিক শিরোনামহীন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বাংলাদেশের সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
প্রশ্ন রেখে জিয়া বলেন, ‘কপিরাইট সার্টিফিকেট, রায় থাকার পরেও তা মেনে না নিয়ে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে গেলেও যদি শাস্তি না হয়, তাহলে এসব দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানিকে কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে? সুবিচার কীভাবে পাবে আর্টিস্টরা?’
এদিকে, কপিরাইট বোর্ড থেকে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জি সিরিজ। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বিষয়টি যেহেতু আদালতে বিচারাধীন, তাই এ নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে চাই না। যা হবে সেটা আইনিভাবেই হোক।’
আরও পড়ুন:
‘এভাবে বিয়ে করা নাকি অর্থহীন’