রানীশংকৈলের ‘স্বর্ণের পাহাড়’ ঘিরে রেখেছে পুলিশ

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
২৭ মে ২০২৪, ১৬:৫১
শেয়ার :
রানীশংকৈলের ‘স্বর্ণের পাহাড়’ ঘিরে রেখেছে পুলিশ

জ্বীনের ‘স্বর্ণের হাড়ি’ পেয়ে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে গভীর রাত পর্যন্ত ইটভাটার মাটি খুঁড়তে নেমে পড়েন ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের শত শত মানুষ! পরিস্থিতি এতটাও জটিল হয়ে পড়ে যে, স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করতে বাধ্য হয়। এমনকি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ভাটাটির মাটির স্তূপ।

ইটভাটার মাটির স্তূপকে স্থানীয়রা বলছেন, ‌‘স্বর্ণের পাহাড়’। নানা বয়সের হাজারো মানুষ যখন রাত-দিন এক করে সেখানে স্বর্ণের লোভে মাটি খুঁড়ে যখন আলোড়ন ফেলে দিয়েছে ঠিক তখনই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা আসে। গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কাতিহার ‘আরবি ব্রিকস’ নামের ওই ইটভাটার চারপাশে ১৪৪ ধারা জারি করে একটি প্রজ্ঞাপন দেন রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান। এরপর পুরো এলাকা লাল কাপড়ের চিহ্ন দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আরবি ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটায় মাটির স্তূপ খুঁড়ে স্বর্ণ পাওয়া যাচ্ছে—এমন খবরে স্থানীয় লোকজনসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গার অসংখ্য মানুষ বেশ কিছুদিন ধরে খুন্তি, কোদাল, বাসিলা দিয়ে মাটি খুঁড়ে স্বর্ণের সন্ধান করছে। এতে যেকোনো সময় ঘটনাস্থলে মারামারি, খুন, জখমসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ইটভাটা এলাকা ও আশপাশে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাতিহার বাজার প্রবেশ করতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পাহারায় রয়েছেন। একইভাবে ইটভাটার মাটির বিপরীত দিকে কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যেরা দায়িত্ব পালন করছেন। মাটির স্তূপে লাল কাপড়ের নিশানা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। একজন গ্রাম পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ইটভাটার একটু সামনেই রাজোর মোড় এলাকায় রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাণীশংকৈল সার্কেল) মোহা. রেজাউল হকের তদারকিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পাহারায় রয়েছেন। 

অভিযোগ করে ওই ইটভাটার ম্যানেজার আসাদুজ্জামান লিটন বলেন, ‘ভাটা বন্ধ করার উদ্দেশে সোনা সোনা বলে এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই মেলেনি। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ হয়েছে।’

রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, ‘মাস খানেক ধরে মানুষ সেখানে উপস্থিত হয়ে মাটি খুঁড়তে থাকে। যেহেতু সেখানে মাটি খোড়ার জন্য কোদাল, খুন্তি, শাবল, বসিলা সরঞ্জামাদি নিয়ে দলবদ্ধ হচ্ছে। সে কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ইটভাটার আশপাশ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই ইটভাটার ওই মাটিরস্তূপে সাধারণ মানুষকে ভিড়তে দেওয়া হবে না

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ঠাকুরগাঁও সম্পূর্ণ বন্যামুক্ত একটা জেলা। যেখানে মাটিতেই সোনা ফলে সেখানে মনোযোগ দিয়েই অনেকে গাড়ি-বাড়ি, সোনাদানার মালিক হয়েছেন। সোনার হরিণের পেছনে তাই এই ছোটাছুটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। পরিশ্রম, বিদ্যা-বুদ্ধি ও মেধা নিয়োগ করেই সম্পদ অর্জন করতে হবে।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাণীশংকৈল সার্কেল) মোহা. রেজাউল হক বলেন, ‘১৪৪ ধারা জারির পর মাটি খননের সন্ধানে যে আসছে, তাকেই আইনের আওতায় নেওয়া হচ্ছে। সকাল থেকে বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। ’