সচেতন না হলে আমরা সরকারের হাত থেকে বাঁচতে পারব না: মির্জা আব্বাস
দেশের মানুষকে সচেতন না করা গেলে সরকারের হাত থেকে আমরা বাঁচতে পারব না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। আজ রবিবার প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ রচিত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জীবনভিত্তিক গবেষণা গ্রন্থ ‘বেগম খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’ বইয়ের পাঠ উন্মোচন ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশের মানুষকে আমরা যদি সচেতন করতে না পারি, নিজেরা যদি সচেতন না হই এই সরকারের হাত থেকে আমরা বাঁচতে পারব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে কেউ কেউ আমাদের গরম এবং ঠাণ্ডাভাবে সমালোচনা করেছেন। আমরা যদি সেগুলো ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করি তাহলে তা কাজে লাগবে। যারা সমালোচনা সহ্য করতে পারে না তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সুতরাং এই সমস্যা থেকে আমাদের শিখতে হবে, আমাদের বুঝতে হবে এবং কারেকশন করতে হবে।’
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর জোট নিয়ে সরকারের সমালোচনা প্রসঙ্গ টেনে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘১৯৯৬ সালে জামায়তে ইসলামীকে নিয়ে আওয়ামী লীগ যে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে সেই নিয়ে তো বিএনপির পক্ষ থেকে শক্ত কোনো বক্তব্য নেই। এখন তো শক্ত বক্তব্য দেওয়ার যুগ, গ্লোবাল যুগ। আপনাদের গবেষণা সেল কোথায়? খালেদা জিয়া কি নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে রাজনীতিতে এসেছিলেন? এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আন্দোলন করছেন নিজের জন্য, নাকি দেশের জন্য?’
নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘আমি আন্দোলনের মানুষ। শহীদ জিয়ার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতির প্রথম দিন থেকেই আছি। অনেক যুগান্তকারী কাজ করেছেন খালেদা জিয়া। আমাদের অনেক কিছু করার এখনো বাকি আছে। একটা বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি। তার মধ্যেও যা কিছু করা সম্ভব সব কিছু করার চেষ্টা আমরা করব।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলে তাদের আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে বেগম খালেদা জিয়া কেয়ারটেকার সরকার দিতে হয়েছে। আসলে সংসদীয় পদ্ধতির মাধ্যমে কেয়ারটেকার সরকার করা হয়েছে। কত বড় ঘটনা, খালেদা জিয়া কত বড় মাপের নেতা তিনি। আজ শেখ হাসিনা যে আচরণ করছেন, এর দশভাগের একভাগ করলেও আওয়ামী লীগ দাঁড়াতে পারত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি পর দেশের অনেকেই বলছে, না আর পারল না, এই সরকার আগামী পাঁচ বছরই থাকবে। আবার অনেকে বলেন, যতদিন শেখ হাসিনা জীবিত আছেন, কেউ নড়াতে পারবেন না। কিন্তু এখন উনি নিজেই নিজেই নড়ছে। পুলিশের সাবেক আইজি, সাবেক সেনা প্রধান এবং একজন সংসদ সদস্য-এই তিন ঘটনায় সরকার খুব বিব্রত- গণমাধ্যমে এসেছে। এর দায় কার।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহবুবউল্লাহ বলেন, ‘আজকে হতাশা আছে, নিরাশা আছে। কিন্তু সব কিছুর মধ্যে আশার আলো সৃষ্টি করতে পারে এই বইটি তেমন একটি বই। যাকে নিয়ে এই বইয়ের আলোচনা, তিনি বেগম খালেদা জিয়া। এই মানুষটির ওপর চরম নিষ্ঠুরতা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সরকার যা করেনি, এই সরকার তা করছে। যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করেছে ব্রিটিশরা তাদের এতো নিষ্ঠুর আচরণ করেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ খালেদা জিয়া মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে, তাদের হৃদয় এতটুকু গলেনি যে তাকে মুক্তি দেবে। কীসের এতো ভয়? যে মানুষ অসুস্থ, দুর্বল হয়ে পড়েছেন, তাকে সামান্য সহানুভূতিটুকুও দেখাচ্ছে না। এদেশ থেকে সহানুভূতি হারিয়ে গেছে।’
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে অবদান, তার ওপর এই সরকার চরম নিষ্ঠুরতা করছে। এতো নিষ্ঠুর আচরণ কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের সঙ্গে ব্রিটিশরাও করেনি। রাজনৈতিক কারণে তার ভিত্তিহীন মামলায় সাজা হলেও তার জনপ্রিয়তা, বয়স, সামাজিক মর্যাদা, নারী, সর্বশেষ শারীরিক অবস্থাসহ সব দিক দিয়ে তার মুক্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু সরকার তাকে সেই সুযোগ দিচ্ছে না।
লেখকের ভাই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুবউল্লাহর সভাপতিত্বে ও কবি আবদুল হাইয়ের পরিচালনায় এতে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে রাষ্ট্র বিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, ড. আসিফ নজরুল, ড. সিদ্দিকুর রহমান খান, দিনারজাদিসহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপি নেতা এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আফরোজা খান রিতা, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জহির উদ্দিন স্বপন, শামা ওবায়েদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, জাতীয় পার্টি (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুরসহ বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?