প্রবল হয়ে সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে রেমাল

মোংলা-পায়রায় ৭ এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ মে ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
প্রবল হয়ে সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে রেমাল

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গতকাল সন্ধ্যার পর ঘূর্ণিঝড় রেমালে রূপ নিয়েছে। আজ রবিবার দুপুরের পর ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব বাংলাদেশে শুরু হতে পারে। আঘাত হানতে পারে সন্ধ্যায়। গতকাল সাগর উত্তাল হওয়ায় সতর্ক সংকেত পরিবর্তন করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় রেমাল গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছের এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রবিবার দুপুরের পর প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে রেমাল খুলনা ও বরিশাল উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আবহাওয়াবিদ মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, খেপুপাড়া ও পশ্চিমবঙ্গে সাগর আইল্যান্ড ঘেঁষে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে। রবিবার বিকাল থেকেই ঝড়ের প্রভাব উপকূলীয় এলাকায় দেখা যাবে। ফলে কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, উপকূল অতিক্রমের সময় যদি ওই এলাকায় জোয়ার থাকে সে ক্ষেত্রে তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। তবে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হলে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের উচ্চতা তিন দশমিক ২২ ফুট।

আবহাওয়াবিদরা জানান, সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর ৭০ শতাংশ বাংলাদেশ এবং ৩০ শতাংশ ভারতে আঘাত হানতে পারে।

প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ থাকে প্রতি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। আর বাতাসের গতি ৮৯ থেকে ১১৮ কিলোমিটার থাকলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়, ১১৯ থেকে ২১৯ পর্যন্ত অতি প্রবল এবং বাতাসের গতি প্রতি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের বেশি থাকলে সুপার সাইক্লোন বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

গতকাল উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল রাত আটটার পর থেকে রাজধানী ঢাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়।

আট বিভাগে হতে পারে বৃষ্টি

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে আজ রবিবার দেশের আট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। একই সঙ্গে দেশের উপকূলের ১৫ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। 

বিশেষ প্রস্তুতি

গত রাতে ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মুহিববুর রহমান। পরে তিনি জানান, উপকূলীয় ছয়টি জেলায় বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। জেলাগুলো হলোÑ সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা। এর আগে গতকাল দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ কার্যক্রম পাঠাতে শুরু করেছে। সব জেলায় খাদ্যগুদাম রয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত খাবার ও সরঞ্জাম রয়েছে।

প্রায় ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সাত থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঝড়ের সঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, ফলে পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর ভূমিধস হতে পারে। সব কিছু মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিয়েছি। ৪ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।

নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গতকাল রাত ১০টা থেকে ঢাকার নদীবন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌরুটগুলোতে লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। যে কোনো মুহূর্তে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হতে পারেও বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ছুটি বাতিল

উপকূলীয় এলাকার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। সংস্থার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিনের নির্দেশনায় প্রতিটি স্টেশনে একাধিক রেসকিউ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে খোলা হয়েছে মনিটরিং সেল। এ ছাড়া খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১০ নির্দেশনা 

মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ১০টি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের দেওয়া নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা, জরুরি বিভাগে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, খাবার স্যালাইনসহ জরুরি প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক ওষুধ ও উপকরণ উপকূলবর্তী জেলায় পর্যাপ্ত মজুদ রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং সাপে কামড় দেওয়া রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যান্টিভেনম রাখতে হবে। যেসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স সচল আছে, সেগুলোসহ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে।

কক্সবাজার-কলকাতার ফ্লাইট বাতিল

কক্সবাজার-কলকাতা রুটের আজ রবিবারের ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। গত রাতে বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, রেমালের কারণে বিমান বাংলাদেশের কক্সবাজারগামী রবিবারের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।