‘পুরান ঢাকার সঙ্গে আমাদের আলাদা নাড়ির টান আছে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পুরান ঢাকার সঙ্গে আমাদের আলাদা নাড়ির টান আছে। এই অঞ্চলের মানুষ ভালো থাকুক সেটাই চাই।’
আজ শনিবার বঙ্গবাজারে চার প্রকল্পের আধুনিকায়ন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতি, লুটপাট ও মানুষ খুন করে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি। এরপর দেশ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অস্ত্র চোরাচালানির দেশে পরিণত হয়। সাজাপ্রাপ্ত তারেক জিয়া এখন বিদেশ থেকে দেশে অশান্তির হুকুম দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানুষের সেবা করে। ৭৫ এর পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা ২১ বছর দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। দেশ এগোতে পারেনি। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ থেকেই বিএনপি নির্বাচন বিমুখ।’
তিনি বলেন, ‘দেশ যত উন্নত হচ্ছে মানুষের কাজকর্ম ততো বাড়ছে। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। এরইমধ্যে রাজধানীবাসীর যাতায়াতের জন্য ঢাকাতে একটি মেট্রোরেলপথ তৈরি করা হয়েছে। আরও কয়েকটি মেট্রোরেলপথ নির্মাণ করা হবে। কিছু উপর দিয়ে যাবে, আবার কিছু পাতাল দিয়ে যাবে। সেইভাবেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একসময় ঢাকায় বিদ্যুৎ-পানি ছিল না। বিএনপির এক নেতা ধাওয়াও খায়। পানি পরিস্থিতির অনেক উন্নতি করেছি।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
সরকার প্রধান বলেন, ‘৬ মাস পরপর পানির ট্যাংকি পরিষ্কার করতে হবে। কোথাও যেন পানি না জমে, মশার প্রজননক্ষেত্র না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে চাহিদাও বেড়েছে। বিদ্যুৎ পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুতে অনেক ভর্তুকি দিতে হয়। বিল কমাতে চাইলে বিদ্যুৎ, পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দালাল ধরে টাকা খরচ করে ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার চেয়ে দেশে কিছু করা ভালো। মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে যুব সমাজকে দূরে থাকতে হবে।’
এ সময় পার্ক যেনো মাদক সেবনের জায়গা না হয়, কাউন্সিলরদের সচেষ্ট হওয়ার নির্দেশ দেন সরকার প্রধান।
আসন্ন ঈদুল আজহায় যেখানে সেখানে পশু কোরবানি না করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কুরবানির জন্য সারাদেশে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা করবে সরকার।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এর আগে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবাজারে ‘বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতান’, পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট পর্যন্ত আট লেনের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মণি সরণি (ইনার সার্কুলার রিং রোড)’, ধানমন্ডি হ্রদে ‘নজরুল সরোবর’ এবং শাহবাগে ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান’ আধুনিকীকরণ শীর্ষক চার উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এর মধ্যে -
১০তলা বিশিষ্ট বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতানে পাঁচটি সাধারণ সিঁড়ি ও ছয়টি অগ্নিপ্রস্থান সিঁড়িসহ পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। বিপইণবিতানের প্রতিটি ব্লকের জন্য আলাদা বাহির ও প্রবেশদ্বার থাকবে। ভবনে বৈদ্যুতিক যান্ত্রিক কক্ষ এবং প্রতিটি ব্লকের প্রতি তলায় চারটি করে শৌচাগার থাকবে। এছাড়া ভবনের ভূমিতলে ১৬৯টি গাড়ি ও ১০৯টি মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে।
পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট গেট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আট লেনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মণি সরণির নির্মাণকাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ৯৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের আওতায় ১০ কিলোমিটার নর্দমা (ড্রেন), ১০ কিলোমিটার পথচারী হাঁটার পথ (ফুটপাত), ৩টি উড়াল সেতু (ভেহিকেল ওভারপাস), ৩টি পথচারী পারাপার সেতু (ওভারব্রিজ), দুই কিলোমিটার সংরক্ষণকারী দেয়াল (রিটেইনিং ওয়াল), তিনটি মসজিদ, ছয়টি যানবাহন বিরতির স্থান (বাস-বে) ও ছয়টি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করা হবে। এতে ঢাকা শহরের ভেতরে বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ কমার পাশাপাশি বহুলাংশে যানজট নিরসন হবে।
নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে ধানমন্ডি হ্রদে নজরুল সরোবর নির্মাণ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি।
এছাড়া শাহবাগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যানের আধুনিকীকরণ কাজেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ৬০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই শিশু উদ্যানের আধুনিকায়ন করা হবে।