পর্দায় নজরুলের নায়িকা
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী আজ। আজীবন তিনি ‘চির উন্নত মম শির’ বলে সংগ্রাম করে গেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। তার রচিত গল্প, উপন্যাস, কবিতা নিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র, নাটক। তার একেকটি গল্পের নায়িকা একেকরকম রহস্যময়। তারা দুঃখ সইতে পারে, কিন্তু অপমান নয়। আর সে কারণে নজরুলের নায়িকা চরিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে হাজারো বাঁক পরিবর্তনের দিক। টেলিভিশনে বিভিন্ন সময় অভিনেত্রীরা নজরুলের নারী চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। তাদের মধ্যে আছেন তারিন, ঈশিতা, সুমাইয়া শিমু, নাদিয়া, মম, অপর্ণা ঘোষ, স্বাগতাসহ অনেকে। চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন রোজিনা, মৌসুমী, পূর্ণিমা প্রমুখ। লিখেছেন ফয়সাল আহমেদ
নজরুলের ‘মেহের নেগার’ গল্প অবলম্বনে ২০০৬ সালে যৌথভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন মুশফিকুর রহমান গুলজার ও মৌসুমী। চলচ্চিত্রটিতে কাশ্মীরের তরুণী মেহের নেগারের চরিত্রে মৌসুমী এবং আফগান যুবক ইউসুফের ভূমিকায় ফেরদৌস অভিনয় করেন। মৌসুমী বলেন, ‘সাহিত্য নিয়ে কাজের লোভ সামলানো কঠিন। এসব কাজ খুব একটা করা হয় না। তাই সুযোগ এলে যতই অন্য কাজে ব্যস্ত থাকি, তবু করি। তবে এসব চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে অন্য আট-দশটা নাটকের চেয়ে অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হয়।’ ছবিটি প্রযোজনা করে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। একই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ‘রাক্ষুসী’ গল্প অবলম্বনে। এটি পরিচালনা করেন মতিন রহমান। এর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন রোজিনা, পূর্ণিমা ও ফেরদৌস। পূর্ণিমা বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম আমার প্রিয় কবিদের মধ্যে অন্যতম। তার যে কোনো ধরনের রচনা আমি মুগ্ধ হয়ে পাঠ করি। আর সেখানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এটি আমার ক্যারিয়ারের অনন্য অর্জন বলে মনে করি।’
জনপ্রিয় নাট্যাভিনেত্রী তারিন নজরুলের ‘শিউলিমালা’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত নাটকে অভিনয় করেছেন একাধিকবার। তিনি বলেন, ‘তার লেখা গল্পের নাটকে চরিত্র রূপায়ণের ক্ষেত্রে অনেক বিষয় মাথায় রেখে কাজ করতে হয়। শুধু অভিনেত্রী বা অভিনেতাকে চরিত্রায়ণের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয় এমনটা নয়, পুরো শুটিং ইউনিটকে সময় কাল এবং স্থান সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। নজরুলের নাটকে বেশকিছু প্রতিবাদী নারী চরিত্রও আছে। কিন্তু আমরা সেগুলো পর্দায় দেখতে পাই না। এসব গল্প নিয়ে আরও বেশি বেশি কাজ করা উচিত বলে মনে করি।’
অভিনেত্রী ঈশিতা আবু জাফর সিদ্দিকীর পাণ্ডুলিপিতে বিটিভির প্রযোজনায় একটি নাটকে অভিনয় করেন। তিনি বলেন, ‘সাহিত্যনির্ভর নাটকে অভিনয় করা সব সময় কষ্টসাধ্য। আমার মনে হয় নির্দিষ্ট সময়কালকে কেন্দ্র করে নাটক তৈরি করতে গেলে একটু বেশি সচেতনতা প্রয়োজন। সেটা ভাষাগত হোক কিংবা পোশাক বা মেকাআপে হোক। ছোটবেলায়ও নজরুলের অনেক নাচ-গানে পারফর্ম করেছি।’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
নজরুলের গল্প নিয়ে নির্মিত নাটকের বেশ কয়েকটিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাদিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি নজরুলের মৃত্যুক্ষুধা, বাঁধনহারা, মেহের নেগার, মেজবউ নাটকের নায়িকা হয়ে বিভিন্নভাবেই নিজেকে আবিষ্কার করতে পেরেছি, বিশেষ করে নজরুলের সে সময়কার নারী চরিত্রগুলোকে। এ জন্য নজরুল সাহিত্যের প্রতি অন্যরকম আগ্রহ রয়েছে আমার।’
সুমাইয়া শিমু নজরুলের গল্প নিয়ে নির্মিত অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাঁধনহারা, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা নাটকগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে মনে পড়ে রিক্তের বেদন নাটকের কথা। এতে এক আরবের বেদুইন রমণীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। নাটকটির বেশিরভাগ দৃশ্যেই আমাকে কালো বোরখা পরতে হয়েছে। একে তো কালো পোশাক, অন্যদিকে চৈত্র মাসের কাঠফাটা রোদ। এত কষ্ট করেছি একমাত্র সাহিত্যপ্রীতির জন্য।’ অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ বিদ্রোহী কবির লেখার ভক্ত। তিনি নজরুলের চিঠি কবিতা নিয়ে নির্মিত নাটকে অভিনয় করেছেন। অপর্ণা বলেন, ‘আমি নাটকটিতে অভিনয় করার আগে চিঠি কবিতা একাধিকবার পড়েছি। শৈশব প্রেমের অসাধারণ প্রেমকাহিনি নিয়ে এর প্রেক্ষাপট। এক সময় আমি কবিতার বীনু চরিত্রে নিজেকে ভাবতাম। বীনু চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’
জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মমর অভিনয়ের শুরুটাই হয়েছিল নজরুলের গল্প নিয়ে নির্মিত নাটকের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, ‘যখন শুনলাম কাজী নজরুল ইসলামের মেহের নেগার গল্পের নাম ভূমিকায় অভিনয় করব, তখন বেশ ভড়কে গিয়েছিলাম। অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর অনেকবার মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করলাম গল্পটি। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। প্রথম দিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে গিয়ে খুব স্নায়ুচাপে ছিলাম। যদিও সেদিন আমার সহশিল্পী জাহিদ হাসান অনেক সহযোগিতা করেছেন।’
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল