শিল্পী সমিতিতে কেন এত অস্থিরতা
গত দুই মেয়াদেই নেতৃত্ব নিয়ে আদালতে রিট
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবার শুরু হয়েছে অস্থিরতা। নিপুণবিরোধী মিছিলের মাধ্যমে গতকাল বিষয়টি ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। এই চিত্রনায়িকার শাস্তির দাবিতে দুপুরে এফডিসিতে কয়েক দফা মিছিল হয়। সিনিয়র শিল্পীদের পাশাপাশি এতে জুনিয়ররাও অংশ নেন। তাদের মূলকথা, ‘শিল্প ও শিল্পীর সম্মান নষ্টকারী নির্লজ্জ বেহায়া নিপুণের শাস্তি দাবি।’ গত ২৩ এপ্রিল শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করা হয়। তবে একমাস না পেরুতেই আবার পুরনো রূপে ফিরলেন নিপুণ। সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে গত নির্বাচনের মতো এবারও একই রকম ঘটনা ঘটিয়েছেন। ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনের পর আদালত পর্যন্ত গেছেন তিনি। পরে আদালতের হস্তক্ষেপে দায়িত্ব পালন করেন। সেই মামলার নিষ্পত্তি না হলেও ছাড়েননি সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার। শিল্পী সমিতির এমন পরিস্থিতিতে বিরক্ত সাধারণ শিল্পীরা। কারণ আগে কখনও সমিতি নিয়ে এমন কিছু হয়নি।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। প্রথমবার সভাপতি নির্বাচিত হন নায়করাজ রাজ্জাক। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আহমেদ শরীফ। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে সভাপতি হয়েছেন খলিলউল্লাহ খান, আলমগীর, মাহমুদ কলি, মিজু আহমেদ ও শাকিব খান। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আহমেদ শরীফ, ইলিয়াস কাঞ্চন, মাহমুদ কলি, মাহবুব খান গুই, মিজু আহমেদ, মনোয়ার হোসেন ডিপজল, মান্না, রুবেল, মিশা সওদাগর, অমিত হাসান ও জায়েদ খান। ১৯৮৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৬টি নির্বাচনের ফল নিয়ে কখনই জল ঘোলা হয়নি। নির্বাচনের ফল মেনে নিয়েই দায়িত্ব পালন করেছেন সবাই। পরপর দুই নির্বাচনে (২০২২-২৪ ও ২০২৪-২৬) সাধারণ সম্পাদক পদে পরাজিত প্রার্থী ফল প্রত্যাখ্যান করে রিট আবেদন করেন আদালতে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আফতাব উদ্দিন ছিদ্দিকী বলেন, ‘২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনে নিপুণ পরাজিত হওয়ার পর আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই মামলা কিন্তু এখনো চলমান। তবে তিনি অবৈধভাবে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।’ এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘উনি (নিপুণ) প্রথমবার এক প্রকার জোর করেই দায়িত্ব পালন করেন। তাই এবারও একই পথে হাঁটার চেষ্টা করছেন। তবে এসব বিষয় নিয়ে শিল্পীদের নিজেদের মধ্যেই মীমাংসা করা উচিত বলে আমি মনে করি।’
শিল্পী সমিতির এমন অস্থিরতা নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি গেল মেয়াদের সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘এই সমিতি নিয়ে কোনো প্রকার কথা বলব না। কথা বলার মতো কোনো পরিবেশ এখানে আছে বলে আমি মনে করি না। তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।’ এমন পরিস্থিতিকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। তিনি বলেন, ‘যতদূর জানি, ডিপজল দুই নাম্বারি করে নির্বাচন করেনি। আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে আমার মনে হয় না কিছু পাবেন। সবকিছু মেনে নিয়ে রিট করার মানে হয় না। নিপুণ মালা পরিয়ে বড় মনের পরিচয় দিয়েছিল। এটা দেখে ভালোও লেগেছে। এখন ওর বিপক্ষে সমালোচনাই বেশি হবে।’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
অনেক বছর পর সাধারণ দর্শক আবার সিনেমা হলে যাওয়া শুরু করেছে, এর মধ্যে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়। আবার সমিতির নির্বাচন নিয়ে বারবার আদালতের দ্বারস্থ হওয়া শিল্পীদের জন্য লজ্জার বলেও মন্তব্য করেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও প্রযোজক সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের কাজ হচ্ছে সিনেমা করা। সিনেমা কীভাবে ভালো হয়, সেটা নিয়ে কাজ করা। শিল্পী সমিতি গঠনও হয়েছিল এসব কারণে। গত নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কেউ শিল্পী সমিতির অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আদালতে যায়নি। ছোট ছোট যে সমস্যাগুলো হয়েছে, তার সমাধান শিল্পীরাই করেছে। গতবার প্রথম নিপুণ আদালতে গেছে। এবারও তাই করল। আদালতে যাওয়ার বিষয়টি অকল্পনীয়, কল্পনাতীত। শিল্পী সমিতির আদালতের দ্বারস্থ হওয়া শিল্পীদের জন্য লজ্জার।’ এমন বিষয় নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে, এটাই অস্থিতিকর বলে মনে করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুচন্দা। তিনি বলেন, ‘এই সংগঠন নিয়ে বারবার আদালতের কাছে যাওয়া দুঃখজনক। আমি চাই, সবাই সুন্দরভাবে মিলেমিশে কাজ করবে। কে জিতল, কে হারলÑ এটা বড় কথা নয়। এখানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। শিল্পী সমিতি তো কারও ব্যক্তিগত সংগঠন নয়।’ চিত্রনায়ক ওমর সানী বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না। কিছু খারাপ মানুষ এখানে ভিড়ে জায়গাটি নষ্ট করে ফেলেছে। সিনেমায় পুরোদমে রাজনীতি ঢুকে গেছে। এসব কারণে আর এখানে কাজ করতে ইচ্ছা হয় না। আমরা এখন কোনো সমিতির মধ্যে নেই।’
কোথাও নেই এমন নির্বাচন
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
হলিউড বা বলিউডে কোথাও নেই এমন কোনো নির্বাচন। নায়ক-নায়িকাদের সাধারণ সম্পাদক কিংবা সভাপতি পদে নির্বাচনের খবর কখনো আসতে দেখা যায়নি গণমাধ্যমেও। ভারতে আছে সিনে অ্যান্ড টিভি আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৯ হাজারের বেশি। সংগঠনটি চলে ২১ সদস্যের নির্বাহী কমিটি দ্বারা। এই ২১ সদস্যের মধ্যে ১৫ জন নির্বাচিত হন ভোটের মাধ্যমে। হলিউডে শিল্পীদের সংগঠনের মধ্যে আছে স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড ও আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্ট (সেগ-আফট্রা)। হলিউডের শিল্পীদের সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী। তাদের ডাকা ধর্মঘটে গত বছর হলিউড কার্যত অচল হয়ে গিয়েছিল।