স্বাক্ষর জাল করে নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা

নরসিংদী প্রতিনিধি
১৫ মে ২০২৪, ২১:৫৯
শেয়ার :
স্বাক্ষর জাল করে নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা

নরসিংদী জেলা পরিষদের সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী বরাবর এ লিখিত আবেদন করা হয়। এতে জেলাপরিষদের ৮ সদস্যের স্বাক্ষর দেখা যায়। তবে স্বাক্ষর দেওয়া সদস্যরা বলছেন তাদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। 

জেলা পরিষদের সদস্য মো. আমান উল্লাহ ভূইয়া জানান, অনাস্থাপত্রে তিনি কোনো স্বাক্ষর করেননি। যারা তার স্বাক্ষর জাল করেছেন তাদের এ অনৈতিক কাজের শাস্তি দাবি করেন তিনি। এছাড়া স্বাক্ষর জালকারীদের তিনি পরিষদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেন।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি পরিষদের কতিপয় সদস্য প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে ভূয়া প্রকল্প ও ভাউচারের নামে টাকা উত্তোলন করে ফেলেন। পরে তদন্তকালে তা প্রমাণ হয়। এ সকল অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটতরাজ বন্ধে পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক তখনই দুর্নীতিবাজ সদস্যসরা জাল স্বাক্ষর দিয়ে এ মিথ্যা অনাস্থা প্রদান করেন।

এ বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন ভূঁইয়া জানান, তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হওয়ার পর মসজিদ, মন্দির ও গোরস্থানের টাকা আত্মসাদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অনিয়মের সাথে জড়িত পরিষদের কতিপয় সদস্যরা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পে লিখিত অনাস্থা প্রদান করেন। তিনি এ আবেদনের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধিদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভূইয়াকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে ২৮ নভেম্বর জেলা পরিষদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্বভার গ্রহণকালে তৎকালীন জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (সিও) মোহাম্মদ শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

ওই সিও ঠিকাদারের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নেওয়া, ভুয়া অনুদান প্রদান, গোরস্তান ও মসজিদ-মন্দিরের বরাদ্দের টাকা আত্মসাদ, নতুন প্রকল্প অনুমোদন আনতে অগ্রিম টাকা গ্রহণ ও আপ্যায়নের নামে লাখ লাখ টাকা অনিয়ম করার অভিযোগ উঠে।

পরে ২০২৩ সালের ৩ মে স্থানীয় সরকার ঢাকা বিভাগের পরিচালক শিবির বিচিত্র বড়ুয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্টি কমিটি গঠন করে সিও মোহাম্মদ শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ওই সিওকে জেলা পরিষদ থেকে অন্যত্র বদলী করা হয়। এরপর জেলাপরিষদের লুটতরাজ ও অনিয়ম বন্ধ করে এ পরিষদকে জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেন তিনি। এতে এ পরিষদের কিছু বিপদগামী সদস্য ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রদান করেছেন মনে করছেন জেলা পরিষদের কর্মচারীরা।

এদিকে নরসিংদী-১ থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতীক) বলেন, চেয়ারম্যান মনির হোসেন ভূইয়া নোংরা ষড়যন্ত্রের শিকার। তার বিশ্বাস মনির হোসেন ভূইয়ার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষানিত হয়ে একটি মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।