‘ঈদের দিন নামাজ পড়তে পারলেও আনন্দ ছিল না’
মায়ের কোলে ফিরে এসেছেন সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মির শিকার হওয়া এমভি আবদুল্লাহর ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান। তিনি জানিয়েছেন, ঈদের দিন নামাজ পড়তে পারলেও বন্দীদশায় থাকায় ঈদে কোনো আনন্দ ছিল না। আজ বুধবার সকালে গণমাধ্যমে কথা বলার সময় এ মন্তব্য করেন আইয়ুব।
আইয়ুব লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালিয়া গ্রামের বিনন বেপারী বাড়ির মৃত আজহার মিয়ার ছোট ছেলে।
তিনি বলেন, ‘সোমালিয়ান জলদস্যুদের কাছে আটক থেকে প্রচন্ড ভয়ে আমাদের দিন কাটাতে হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি ভয় হয়েছে মাকে নিয়ে। কারণ বাবাকে হারানোর একমাস পরই আমি বিপদে পড়েছি। এটি কীভাবে মা সহ্য করছেন তা নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুঃশ্চিন্তা হয়েছিল। এখন আমি মায়ের কোলে ফিরেছি, এ আনন্দ সব কষ্ট, সব ভয় জয় করে নিয়েছে।’
আইয়ুব বলেন, ‘আক্রমণের পর জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করতে বলে দস্যুরা। এরপর তারা আমাদেরকে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যায়। প্রায় আড়াই দিন লেগেছে সোমালিয়ায় যেতে। প্রথম কয়েক দিন আমাদের সবাইকে একটি রুমে আটকে রাখে। সবাইকে একই বাথরুম ব্যবহার করতে হয়েছে। দস্যুরাও আমাদের বাথরুম ব্যবহার করেছে। প্রথম কয়েকদিন তারা আমাদের খাবার খেয়েছে। সোমালিয়ায় পৌঁছানোর পর তারা নিজেদের খাবার সংগ্রহ করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের দিন নামাজ পড়তে পারলেও আনন্দ ছিল না। কারণ বন্দীদশা থেকে কবে মুক্ত হব তা নিয়েই দিন গুণতে হয়েছে আমাদের। একজন দোভাষির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি- জলদস্যুরা জাহাজ মালিকের সঙ্গে কথা বলেছেন। মুক্তিপণ নিয়ে জাহাজ মালিকদের সঙ্গে দস্যুদের সমঝোতা হয়েছে। মুক্তিপণ দিলেই নাবিকরা মুক্তি পাবে। ঈদুল ফিতরের ২-৩দিন পর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মুক্তিপণের ডলারের ব্যাগ জাহাজে ফেলা হয়। এরপর টাকা নিয়ে ভাগ হয়ে যায় জলদস্যুরা। তিন ভাগে জাহাজ ছাড়ে দস্যুবাহিনী।’
ঈদের আনন্দ ফিরে এসেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে এসে আত্মীয়-স্বজনদের দেখে মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। যে ঈদ আমরা আতঙ্কে কাটিয়েছি। পরিবার-স্বজনদের পেয়ে সেই ঈদ আনন্দ আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে।’
আইয়ুবের বড় ভাই ওমর ফারুক রাজু বলেন, ‘দস্যুদের আক্রমণের প্রায় এক মাস আগে বাবা মারা যান। সেই শোক না কাটতেই আইয়ুবসহ ২৩ নাবিক সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এতে পুরো পরিবারের ওপর অমাবশ্যার অন্ধকার নেমে আসে। তার ফিরে আসা সবার জন্য আনন্দের।’
প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। এ সময় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। এদিন বিকেলে জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। জাহাজে লক্ষ্মীপুরের আইয়ুব খানসহ মোট ২৩ জন নাবিক রয়েছেন।