নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম বন্ড

অনলাইন ডেস্ক
১৩ মে ২০২৪, ২০:৩৮
শেয়ার :
নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম বন্ড

ব্যাংক বা যেকোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণগ্রহীতা ও দাতা উভয় পক্ষকেই ঝুঁকি নিতে হয়। গ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলেও ব্যাংককে ঠিকই আমানতকারীর সুদ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরো অর্থই পরিশোধ করতে হয়। অন্যদিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মূলধন পর্যাপ্ততা রক্ষার জন্য বন্ড ছেড়ে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে।

বন্ড এক ধরনের ঋণ চুক্তিপত্র যার মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করে এবং চুক্তিপত্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে গ্রাহককে প্রতিশ্রুত সুদসহ লগ্নি করা অর্থ ফেরত দেয়। বন্ডে বিনিয়োগ নিরাপদ এবং এতে বিনিয়োগের বিপরীতে আয় বা মুনাফা আসে তুলনামূলক বেশি, কারণ তা নির্ধারিত থাকে। আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী, জিরো কুপন বন্ডে বিনিয়োগ থেকে আয় থাকবে আয়কর মুক্ত।

দেশে এরইমধ্যে বেশ কয়েক ধরণের বন্ড চালু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লভ্যাংশের বিচারে দুই ধরনের বন্ড- কুপনযুক্ত ও জিরো কুপন। কুপন বন্ড সাধারণত মুনাফার বা সুদের হার নির্দিষ্ট করে ইস্যু করা হয় এবং জিরো কুপন বন্ড অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু থেকে কম মূল্যে বা ডিসকাউন্ট রেটে ইস্যু করা হয়। এই ডিসকাউন্ট রেট বা কম অভিহিত মূল্যই বন্ড হোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ বা সুদ হিসেবে গণ্য হয়।

জামানত রেখে বা না রেখে দুইভাবেই বন্ড ইস্যু করা যায়। জামানত ছাড়াই যে বন্ড ইস্যু করা হয় তা আনসিকিউরড বা জামানতবিহীন বন্ড নামে পরিচিত। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের সুনাম বা ব্র্যান্ডভ্যালুকে বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ করেন। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন বা অগ্রগতির সঙ্গে সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং তা ঐ বন্ডের ট্রাস্টির কাছে জমা রাখা হয় বিনিয়োগকারীর সম্পদের নিরাপত্তার জন্য।

সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ বেক্সিমকো আনসিকিউরড জিরো কুপন বন্ড বাজারে ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করছে। এই বন্ডে বিনিয়োগ বর্তমানে তুলনামূলক লাভজনক। এখানে প্রতিমাসে মুনাফার হার ১৫ শতাংশ। বেক্সিমকো এই অর্থের অধিকাংশ ঢাকা ইপিজেড সংলগ্ন মায়ানগর নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বিনিয়োগ করবে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ৬৫০ একর অনাবাদী জমিতে স্থাপিত ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র দেশের সবচেয়ে বড় সোলার প্রকল্প। ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিস্তা সোলার প্রকল্পে বেক্সিমকো সুকুক বন্ডের মাধ্যমে ২২শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। উদ্যোক্তারা বলছেন আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের বিনিয়োগের পুরো অর্থ উঠে আসবে। মুনাফা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়সহ পুরো ব্যয় উঠে আসতে আরও ৩-৪ বছর সময় লাগতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা, যা এর আগের বছর ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা বেশি। এর বাইরেও বন্ড মার্কেটে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১১৮ কোটি, বিমা তহবিলের ১০ হাজার ৬৪২ কোটি, সাধারণ বিমা কোম্পানির ৩০২ কোটি, জীবন বীমার ১৮ হাজার ৬৬৬ কোটি, বিভিন্ন করপোরেট কোম্পানির ১ হাজার ৮৫ কোটি, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ২৭ কোটি, প্রোভিডেন্ট ফান্ডের ৮ হাজার ৭২৬ কোটি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ২৫১ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ স্থিতি ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ট্রেজারি বিল ও বন্ডে মোট বিনিয়োগ ছিল ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা।