মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে থাকা যুবকের কিডনির বিষয়ে যা জানালেন চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
১২ মে ২০২৪, ১৮:২৭
শেয়ার :
মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে থাকা যুবকের কিডনির বিষয়ে যা জানালেন চিকিৎসক

আলোচিত মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রম থেকে উদ্ধার হওয়া মো. সেলিম মিয়ার (৪৫) দুটি কিডনিই অক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। গতকাল শনিবার বিকেলে তাকে ময়মনসিংহ নিয়ে যায় তার পরিবার। সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের প্রান্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর রাতে প্রতিবেদন দেখেন মেডিসিন ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দ হাসানুল ইসলাম আকাশ। 

সৈয়দ হাসানুল ইসলাম আকাশ বলেন, ‘আল্ট্রাসনোগ্রামের পরীক্ষায় দেখা গেছে, তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়নি। দুটি কিডনিই ঠিক আছে কিন্তু যে জায়গায় কিডনি থাকে সে জায়গায় ক্ষত থাকায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল পরিবারের। আমার ধারণা, রোগী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় আটকে রাখার জন্য কোনো কিছু দিয়ে বেঁধে রাখা বা বেল্ট পরিয়ে রাখার কারণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

চিকিৎসক সৈয়দ হাসানুল হক আকাশ আরও বলেন, ‘তার শরীরে রক্তস্বল্পতা রয়েছে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা একেবারেই কম। শরীর খুবই দুর্বল। পায়ে পানি জমেছে।’ 

তবে বেসরকারি এই ক্লিনিকের রিপোর্টের পরও সেলিম মিয়ার স্বজনদের মন থেকে শঙ্কা দূর হচ্ছে না। এজন্য তারা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে চান। তবে আর্থিক অসংগতি রয়েছে বলে জানান সেলিমের স্ত্রী ফাতেমা। 

একই সমস্যার কথা উল্লেখ করে সেলিমের ছোট ভাই মাহিন মিয়া বলেন, ‘আমার ভাইয়ের অঙ্গহানি ঘটেছে কি না তা অর্থাভাবে পরীক্ষা করাতে পারছিনা।’

জানা গেছে, উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাঁচাশী গ্রামের দিনমজুর হাসিম উদ্দিনের মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে সেলিম গত পাঁচ মাস আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। বাবার অভাব-অনটনের সংসারে তাকে খুঁজে পাওয়ার মতো আর্থিক কোনো সঙ্গতি তাদের নেই। সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারের ভয়ংকর প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ এবং কিডনিসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরির মতো ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় দেশব্যাপী এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। 

ঠিক সেই মুহূর্তে সেলিমের স্বজনরা ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেলিমের ছবি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে দেখতে পেয়ে মা-বাবাসহ তার স্বজনরা ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। গত ৭ মে সেলিমের মা রাবিয়া, চাচাতো ভাই গ্রাম পুলিশ আ. রশিদ সেলিমের সন্ধানে ঢাকা চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে গিয়ে তাকে চিনতে পারেন। পরে থানা পুলিশের সহায়তায় সেলিমকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেলিম মিয়ার পেটে কাটা দাগ দেখে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিবারের লোকজন গতকাল ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়।

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রম থেকে সেলিম নামের এক ব্যক্তিকে উদ্ধারের ঘটনাটি জানার পর থানা থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তার বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। তবে সেলিমের পরিবার থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’