কম ওজনের শিশুর মৃত্যুঝুঁকি ৪ গুণ বেশি: বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ মে ২০২৪, ০১:০৩
শেয়ার :
কম ওজনের শিশুর মৃত্যুঝুঁকি ৪ গুণ বেশি: বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা

পুষ্টিহীনতা থেকে শুরু করে নানা জটিলতায় বিশ্বে প্রতিবছর ২ কোটি স্বল্প বা কম ওজনের শিশুর জন্ম হচ্ছে। যাদের ৯০ ভাগই বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। এসব নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি স্বাভাবিক বাচ্চার তুলনায় চার গুণ বেশি।

এটি প্রতিরোধে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অহেতুক সিজারিয়ান সেকশন কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেজ্ঞরা। এজন্য পাইলট প্রকল্প হিসেবে, স্ক্যানু চালু এমন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠন করার সুপারিশ করেছেন স্ত্রীরোগ বিষেশজ্ঞরা। এজন্য নবজাতক বিশেষজ্ঞ ও নার্সদের একত্রে কাজ করার প্রতিও জোর দিয়েছেন তারা।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ পেরিন্যাটাল সোসাইটি (বিপিএস)'র আয়োজনে '৪র্থ আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন-২০২৪' এর দ্বিতীয় দিনে ‘বাংলাদেশে প্রি-টার্ম এবং কম ওজনের নবজাতকদের জীবন বাঁচানোর জন্য এম-স্ক্যানুর ভূমিকা’ শিরোনামে নীতি নির্ধারক মহলের একটি আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

এ সময় বক্তারা কম ওজন ও অপরিণত অবস্থায় জন্মানো শিশুদের জন্য দেশব্যাপী ‘ইমিডিয়েট ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার’ (আইকেএমসি) সেবা চালুর উদ্যোগের প্রতি জোর দেন।

৮ থেকে ৯ মে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে দেশ ও বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, গবেষক ও নীতি নির্ধারক মহলের প্রতিনিধিগণ অংশ নেন। অধিবেশনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পেরিন্যাটাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক লায়লা আরজুমান্দ বানু। সমাপনী বক্তব্য রাখেন নবজাতক স্বাস্থ্য নিয়ে জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে বক্তারা বলেন, জন্মের সময় নবজাতকের ওজন ২৫শ গ্রামের কম হলে তা ‘লো বার্থ ওয়েট’ বা ‘কম ওজন নিয়ে জন্ম’ বিবেচনা করা হয়। এ ধরনের শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় চার গুণ বেশি হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার এবং স্ক্যানুর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. জহুরুল ইসলাম নবজাতকের মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে সরকারের উদ্যোগ ও সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল অফিসার সাচিও ইয়োশিদা ক্যাঙ্গারু মাদার নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশসমূহ তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অপরিণত ও স্বল্প ওজনের শিশুদের অবস্থাও তুলে ধরেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, প্রতিবছর বিশ্বে ২ কোটি শিশু স্বল্প ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যার মধ্যে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো থেকেই ৯৫ শতাংশ, যার প্রায় ৭০-৮০ ভাগই নবজাতক অবস্থায় মারা যায়।

আলোচকরা বলেন, অপরিণত ও অপেক্ষাকৃত কম ওজনের নবজাতক শিশুর অকাল মৃত্যুরোধে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার অপরিহার্য। এর মাধ্যমে নবজাতক তার মায়ের বুকের সাথে স্কিন-টু-স্কিন কনটাক্টে থাকে। তাই নবজাতকটির শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নতি হয়, শরীরের তাপমাত্রার সামঞ্জস্যতা ঘটে, মায়ের সাথে বন্ডিং বাড়ে এবং হৃৎপিণ্ড স্বাভাবিক গতি ফিরে পায়। এতে তার মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে নবজাতকদের জন্য ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ারের উপকারিতা তুলে ধরা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য এ সেমিনারের আয়োজন করা এবং সাধারণ জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।