বিতর্কে ‘মা লো মা ঝি লো ঝি’, বাউল পরিবারের প্রতিবাদ
কোক স্টুডিও বাংলা’র তৃতীয় সিজনের দ্বিতীয় গান ‘মা লো মা’। গেল শুক্রবার গানটি প্রকাশ্যে আসার পরই শ্রোতারা তা লুফে নেয়। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রীতম হাসান, সাগর দেওয়ান, আরিফ দেওয়ান ও র্যাপার আলী হাসান। তাদের গাওয়া এই গানটি এখন ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে শীর্ষে।
তবে এর মধ্যেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে গানটির প্রকৃত গীতিকার কে? তা নিয়ে। কোক স্টুডিও বাংলার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দেওয়ান পরিবারের দুই সদস্য- সাগর ও আরিফ দেওয়ানের পূর্বপুরুষই ‘মা লো মা ঝি লো ঝি’ গানের মূল রচয়িতা। আরও একটি সহজ করে বললে, বাউল আবদুল খালেক দেওয়ানের গান এটি। তবে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নেত্রকোনার সংস্কৃতিকর্মীরা। তাদের দাবি, এই গানের স্রষ্টা বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন।
তারা জানান, প্রায় শত বছর ধরেই গানটি ভাটি অঞ্চলে বাউল রশিদ উদ্দিনের লেখা হিসেবেই গাওয়া হচ্ছে।
গতকাল সোমবার নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবের সামনে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-সাহিত্য সংগঠনসমূহ ও সম্মিলিত নাগরিক সমাজের ব্যানারে কোক স্টুডিও বাংলার বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে গানটি বাউল আবদুল খালেক দেওয়ানের লেখা বলে প্রচারের অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা। এর আগে, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস, বাউল রশিদ উদ্দিনের ছেলে আবু আনসার কালা মিয়া, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ এমরান, লোকজসংস্কৃতি গবেষক গোলাম মোস্তফা, জেলা উদীচীর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানসহ অনেকে।
এ সময় ছবি বিশ্বাস বলেন, ‘“মা লো মা ঝি লো ঝি” গানটি নেত্রকোনার বাউল সাধক প্রায়াত রশিদ উদ্দিনের সৃষ্টি। বাংলার ভাটি বা হাওরাঞ্চলে তিনি মালজোড়া গানের অমর সাধক। এই জনপদের মাটি থেকে উঠে এসেছে এই গান। গানের কথায় কথায় এই অঞ্চলের ছোঁয়া রয়েছে। সম্প্রতি কোক স্টুডিও দুইটি শব্দ এদিক-সেদিক করে এই গানটি বাউল আবদুল খালেক দেওয়ানের নামে চালিয়ে দিয়েছে। এটা অনৈতিক।’
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাউল রশিদ উদ্দিনের ছেলে আবু আনসার কালা মিয়া বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এই গান আমার বাবার নামে বিভিন্ন শিল্পীরা গাইছেন। এটা কী করে পরিবর্তন করা হলো! আমরা এর বিহিত চাই।’
উল্লেখ্য, মালজোড়া গানের জনক বাউল রশিদ উদ্দিন ১৮৮৯ সালে নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ‘মানুষ একটা কলের গাড়ি’, ‘মানুষ ধর মানুষ ভজ’, ‘এই যে দুনিয়া কীসেরও লাগিয়া’, ‘সোঁয়াচান পাখি’ এমন অনেক কালজয়ী গানের স্রষ্টা তিনি। ‘মানুষ ধর মানুষ ভজ/ শুন বলি রে পাগল মন’ গানের জন্য ১৯৯৯ সালে শ্রেষ্ঠ গীতিকার (মরণোত্তর) হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এই বাউল শিল্পী।